শিশু শিক্ষায় বাণিজ্য - দৈনিকশিক্ষা

শিশু শিক্ষায় বাণিজ্য

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক বর্তমান সরকারের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশাল অর্জন। এর ফলে দেশ বিদেশে শিক্ষাবান্ধব সরকার হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। এত কিছুর পরেও শিশু শিক্ষা বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মত বাণিজ্যিক  উদ্দেশ্যে কিন্ডার গার্টেন স্কুল গড়ে উঠেছে। এসকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ নেই বললেই চলে। তাদের প্রদত্ত শিক্ষা হচ্ছে ছিদ্র থলির ভিক্ষার মতো। সরকারের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির পরেও যেসব কারণে অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না সেগুলো হল পাঠ্যপুস্তক, শিশুবান্ধব অভিন্ন কর্মঘণ্টা, শিক্ষক সংকট, পাঠদান বহির্ভূত কাজ ইত্যাদি। 

পাঠ্যপুস্তক: আমাদের অধিকাংশ অভিভাবকদের বর্তমান ধারণা বেশি বেশি বই, বড় বড় পাস তাদের সন্তানদের মহাপণ্ডিত বানিয়ে দেবে। বয়স, রুচি, সামর্থের বাইরে পড়াশুনা বা খাবার কার্যকর ভূমিকা তো রাখেই না বরং শারীরিক-মানসিক ক্ষতিসহ জ্ঞান অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শিক্ষার্থীর বয়স, রুচি, সামর্থ্য অনুযায়ী মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে জ্ঞান অর্জনের অভিপ্রায় জ্ঞানী-গুণী ও শিক্ষাবিদদের মাধ্যমে কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে থাকে। অথচ কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয়গুলোতে শিশুর ওপর পাঠ্যবই বহির্ভূত অতিরিক্ত বই চাপিয়ে দেয়। যা শিশু শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনের চ্যালেঞ্জ। এতে আমাদের অভিভাবকদের মনে গর্ব, অহংকারবোধ জন্মায়। প্রকৃত অবস্থা হলো অতিরিক্ত খাবার খেয়ে বমি করলে যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তেমনি না বুঝে মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় লেখা অনেকটা বমি করার মতো। জ্ঞান অর্জন ব্যতিরেকে অহেতুক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বই খাতার বোঝা শারীরিক ও মানসিক শাস্তি। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদন ব্যতিরেকে শিশুদের সকল বইয়ের ওপর জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা দরকার। এতে শিশু শিক্ষায় বাণিজ্য হ্রাসসহ বিকশিত হবে শিশুর ভবিষ্যৎ।

শিশুবান্ধব অভিন্ন কর্মঘণ্টা: সরকার দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় উচ্চশক্তিসম্পন্ন বিস্কুট ও সারাদেশের মায়ের হাতে রান্না খাবারের মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীরা ক্ষুধা নিবারণে সাফল্য অর্জন করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এত কিছুর পরও আমাদের দেশের খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের লোকজনও তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে আগ্রহী হচ্ছেন না। যার ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টার সাথে কিন্ডার গার্টেনসহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার সময়সূচির বিশাল ব্যবধান।

আমাদের দেশে গরিব মানুষের সন্তানেরা কম বেশি তাদের বাবা-মাকে সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়াও তাদের বিকেল বেলা খেলাধুলা, বিনোদন, বিশ্রাম ও সকাল বেলা আরবি পড়াসহ একটু অবসরের সুযোগ পায় না। তাই উপবৃত্তিসহ নানা সুবিধা উপেক্ষা করে তাদের সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে থাকেন। সকল শিশুর জন্য অভিন্ন শিশুবান্ধব কর্মঘণ্টা হলে শিশু শিক্ষায় বাণিজ্য হ্রাস পেত। অথচ সংশ্লিষ্টরা ছোট সোনামনিদের তাদের মতো কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে বিবেকবর্জিত কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে বিদেশি কর্মঘণ্টার সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা তুলনা করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংকট আজ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। যার ফলে বাণিজ্যকভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ঘটছে।

শিক্ষক সংকট: প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ প্রবাদের মত। অবসর, মাতৃত্ব, চিকিৎসা, ছুটি, প্রশিক্ষণ নানা কারণে প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট দেখা যায়। শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতায় বিদ্যালয়ে বেহাল দশা দৃশ্যমান হয়। শিক্ষক সংকট শূন্যের কোঠায় নামিয়ে না আনা হলে অভিভাবকেরা স্বাভাবিকভাবে বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানদের ভর্তি করছেন। 

পাঠদান বহির্ভূত কাজের চাপ: পাঠদান বহির্ভূত কাজের চাপে প্রাথমিকের শিক্ষকেরা যথাযথ শিক্ষার্থীর যত্ন নিতে পারছেন না। যার ফলে ‘শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়ান না’ এ অপবাদের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। ফলে লাভবান হচ্ছে বাণিজ্যিকভিত্তিক শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক শিক্ষায় নানা চ্যালঞ্জের মাঝেও কতিপয় শিক্ষকের পাঠদানের আন্তরিকতার প্রশ্ন আজ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা। যেকোনো মূল্যে শিশু শিক্ষার্থীর ওপর অবহেলা শূন্য সহিষ্ণুতায় নামিয়ে আনতে হবে। ২১ মার্চ ২০১৯ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংকট দূরীকরণার্থে সকল শিক্ষার্থীর শিশুবান্ধব অভিন্ন কর্মঘণ্টা, পাঠ্যবই এর দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী, বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করবেন বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংকট ও শিশু শিক্ষায় বাণিজ্য দূর হোক এ প্রত্যাশা। 

 

লেখক: আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।

রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অফিস চলবে ৯টা-৩টা - dainik shiksha রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অফিস চলবে ৯টা-৩টা দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত শিগগিরই - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত শিগগিরই মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কাল - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কাল তিন সমন্বয়ক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন বলে ডেকে নেয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী - dainik shiksha তিন সমন্বয়ক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন বলে ডেকে নেয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00661301612854