সাধারণ ছুটি না রেখে জনজীবন সচল করার কথা ভাবছে সরকার - দৈনিকশিক্ষা

সাধারণ ছুটি না রেখে জনজীবন সচল করার কথা ভাবছে সরকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সাধারণ ছুটি না রেখে মানুষকে সচেতন করে স্বাভাবিক কাজকর্ম ও জনজীবন সচল করার কথা ভাবছে সরকার। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, মুখে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অভ্যাস সৃষ্টি করার মাধ্যমে মানুষের মাঝে করোনা আতঙ্ক কমে যাবে। আর দেশের অর্থনীতির চাকা ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকা সচল রাখার জন্য পরবর্তী মেয়াদে সাধারণ ছুটি বাড়ানো নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। শনিবার (৯ মে) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তানিম আহমেদ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সরকারি দলের নেতারা বলছেন, মানুষকেও বাঁচাতে হবে, অর্থনীতির চাকাও সচল রাখতে হবে। এ ধারণা থেকে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি পরিহার করার পথে যেতে চায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সাধারণ ছুটি আরো দীর্ঘমেয়াদি হলে অর্থনীতির ওপর দারুণভাবে প্রভাব পড়বে। তাই সবকিছু থামিয়ে দিয়ে আর বেশিদিন থাকতে চাচ্ছে না সরকার। এরই মধ্যে সরকার সীমিত আকারে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানাও খুলে দিয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে খোলা হচ্ছে দোকানপাটও।

সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছুটি বা লকডাউন দিয়ে লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না নভেল করোনাভাইরাসের। আবার সাধারণ জনগণকেও ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিশ্বের অন্য দেশগুলোও এখন লকডাউনের বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। উন্নত দেশগুলোও অর্থনীতির হুমকির কথা ভাবতে শুরু করেছে। সেই চিন্তা থেকেই ইতালি, স্পেনসহ কিছু দেশ এরই মধ্যে লকডাউন শিথিলও করেছে। নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এখনো কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। ফলে এ দুর্যোগ আমাদের আরো ভোগাবে। এ পরিস্থিতিতে সরকারকে করোনা মোকাবেলায় নতুন কিছু ভাবতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের বিকল্প পদ্ধতি কী হতে পারে—সে প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছে সরকার। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অভ্যস্ত হতে হবে। সচেতন, সতর্কভাবে স্বাভাবিক কাজে নিশ্চয়ই ফিরতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবী থেকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কখন বিদায় নেবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এখনো এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। কয়েকটা আবিষ্কারের কথা বললেও সেটার এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। বিগত শতাব্দীতে যে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর প্রতিষেধক আবিষ্কার হতে প্রায় ১০ বছরের মতো সময় লেগেছিল। এখন বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে, তাই হয়তো কম সময় লাগবে। কিন্তু আমাদের তো থেমে থাকলে চলবে না। সচেতন হয়ে সবাইকে নিজের কাজ করতে হবে। জীবন-জীবিকা চালু রাখতে হবে। 

সরকারের আরেকজন মন্ত্রী বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এর ভয়াবহতা কম-বেশি থাকবে। ততদিন মানুষকে ঘরে বসিয়ে রাখা যাবে না। ফলে সরকারকে ভাবতে হচ্ছে বিকল্প উপায়। আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মানা, সতর্কতা অবলম্বন করে মানুষকে 

চলতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এজন্য টেলিভিশন, বেতারসহ সব গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বেশি প্রচার করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রয়োজনে বাধ্য করার প্রক্রিয়াও শুরু করা হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঙ্গরোধ করে রাখা অব্যাহত থাকবে। মানুষকে আটকে রেখে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পুষ্টিমান নিশ্চিত করে খাবার গ্রহণের বিষয়ও প্রচার করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা মোকাবেলায় কী করা যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কী উপায়ে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হচ্ছে, সে বিষয়গুলোও তিনি পর্যালোচনা করছেন। এছাড়াও দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন, সাময়িকী, গবেষকদের গবেষণার অগ্রগতি সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেও বিকল্প উপায়ে কীভাবে করোনা মোকাবেলা করা যায়, সে পথ বের করার চেষ্টা করছেন। সাধারণ ছুটি অব্যাহত রেখে মানুষকে ঘরে আটকে রেখে আসলে সে অর্থে সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতনতা, সতর্কতা অবলম্বন করে মানুষকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায়, স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী। তিনি মনে করেন, অর্থনীতিও বাঁচাতে হবে, বাঁচাতে হবে মানুষকেও। এ দুটি বিষয় বিবেচনা করেই করোনা মোকাবেলার পথ ভাবছে সরকার। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ। চীন, সৌদি আরব কিংবা ইরানের মতো নয়। এদেশে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া যায় না। সরকার গত দেড় মাসের মতো লকডাউন করে জনগণকে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। এর অংশ হিসেবে মানুষকে বলা হচ্ছে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাকুন। আর যদি বের হতেই হয়, তাহলে সব ধরনের সুরক্ষা নিয়ে বের হন। গত দেড় মাস ধরে এটা অভ্যাস করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকেই সচেতন হচ্ছে, আবার কেউ কেউ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখন কি কাউকে পিটিয়ে এসব বিষয় মানাবে নাকি? অতীতে দেখা গিয়েছিল, বিভিন্ন সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে পিটিয়েছে। এমনকি ভারতেও এবার পেটানো হয়েছে। কিন্তু আমরা কাউকে এমন নির্দেশ দিইনি। লাঠি দিয়ে পেটানো হয়নি। মানুষকে বোঝানো হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোনো দেশেরই এ ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতি ছিল না। ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় আমাদের অবস্থান ভালোই আছে। সরকার এ দেড় মাস ব্যবহার করেছে নিজের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার জন্য। টেস্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে, আলাদা হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সুবিধা আমরা বৃদ্ধি করেছি। সরকার তার চেষ্টা করছে। এখানে আমাদেরও চেষ্টা করে যেতে হবে। 

ফারুক খান বলেন, আমাদের দেশে ঈদকেন্দ্রিক একটা বড় ব্যবসা হয়। গত রমজানের ঈদেও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এ ব্যবসাটা শুধু ব্যবসায়ীদের হয় না, সবাই সুবিধা ভোগ করে। তাই সবার কথা চিন্তা করে সরকার বলছে সামনে ঈদ আছে। তোমরা খুলতে পার। তবে সেটা অবশ্যই সুরক্ষা নিশ্চিত করেই খুলতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই এ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি মনে করি, সরকার এটা ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করছে। 

তিনি বলেন, আমি মনে করি আগামী দুই থেকে তিন বছর পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন হবে না। মানুষ বের হবে মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে। সবাইকে অ্যাডজাস্টমেন্ট করে চলতে হবে। এখন আমাদের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জীবনকে আরো সহজ করতে হবে। এরই মধ্যে আমাদের চলতে হবে, অগ্রসর হতে হবে। অর্থনৈতিক কমকাণ্ড চালু করতে হবে। 

আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল - dainik shiksha এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর - dainik shiksha এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ - dainik shiksha হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি - dainik shiksha ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077390670776367