নেত্রকোনায় শিক্ষা বিস্তারে ১২৭ বছর ধরে যে বিদ্যালয়টি আজও আলো ছড়াচ্ছে সেটি হলো প্রাচীনতম দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়।
১৮৮৯ সালে ময়মনসিংহের তত্কালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রমেশ চন্দ্র দত্ত নেত্রকোনা মহকুমায় এসে দেখেন সেখানে কোনো বিদ্যালয় নেই, তখনই তিনি শহরের মধ্যভাগে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। আর তারই নামের টাইটেলে বিদ্যালয়ের নামকরণ হয় দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। তিনি স্থানীয় সুধীজনদের সঙ্গে অলোচনা করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তত্কালীন বৃটিশ আমলে এ বিদ্যালয়ই ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরিপ্রাপ্ত একমাত্র বিদ্যালয়। স্থানীয় সুধীজন বিদ্যালয়ের জন্য জমিদান করেন। এ বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে যেমন সুনাম অর্জন করেছেন, তেমনি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করছেন। ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে এ বিদ্যালয়ে। বর্তমানে প্রভাতী ও দিবা শাখায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
নেত্রকোনা শহরের প্রাণকেন্দ্র এবং অভিজাত পাড়া হিসেবে পরিচিত মোক্তারপাড়ায় বিদ্যালয়টির অবস্থানও মনোরম পরিবেশে। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের যেমন রয়েছে একাধিক সড়ক তেমনিই পাশে বিদ্যালয়ের ভূমিতেই রয়েছে নেত্রকোনার ভাষা শহীদের প্রধান শহীদ মিনার। কিন্তু বিদ্যলয়টি আজও সরকারিকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী হলেন তত্কালীন অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী ও কলকাতা কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র নলিনী কান্ত সরকার, শান্তি নিকেতনের সঙ্গীত বিভাগের অধ্যক্ষ শৈলজা রঞ্জন মজুমদার, কলকাতার নামজাদা সাংবাদিক অমিতাভ চৌধুরী, প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব সিদ্দিকুর রহমান, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল সিদ্দিকী, প্রাক্তন সচিব দুলাল হাফিজ, কবি হেলাল হাফিজ, ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেইজড্ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোফাক্কারুল ইসলাম ভুঁইয়া, সাবেক সচিব ও বর্তমান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য উজ্জল বিকাশ দত্ত এবং সাবেক আইজিপিও বর্তমান রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার। নেত্রকোনার ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধিও এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। খেলাধুলার জগতে এ বিদ্যালয় ছিল অনন্য।
শিক্ষার্থীদের ভর্তির চাপ থাকায় বিদ্যালয়টিতে ২০১৫ সাল থেকে দুই শিফট চালু করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ এখন ডিজিটালাইজড। অর্থাত্ প্রধান শিক্ষকের নজরে। বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষক সংখ্যা ৫১ জন। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। বইয়ের সংখ্যা সাড়ে ৪হাজার। বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ৪ দশমিক ৩৩ একর। এতো জায়গা জেলার আর কোনো স্কুলে নেই। বিদ্যালয়ের স্কুল কম্পাউন্ডের বাইরে শহরের ভিতর জয়নগর মৌজায় রয়েছে নিজস্ব খেলার মাঠ। এ বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের উত্স রয়েছে। বিদ্যালয় সংলগ্ন ভূমিতে ৫০টি দোকানঘর থেকে ভাড়া আদায় হচ্ছে।
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলও বিদ্যালয়ের ভালো। ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৯৬%। ৪২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য রয়েছে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি। এর বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক জিএস এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাবিবুর রহমান খান রতন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন এবিএম শাহ্জাহান কবীর।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান খান রতন জানান, বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের জন্য দ্বিতল ব্যবসা কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।