আজ থেকে অর্ধশতাব্দী পূর্বে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্যারি বেকার তার বিখ্যাত ‘হিউম্যান ক্যাপিটাল’ (মানব পুঁজি) বইয়ে দেখিয়েছেন যে, পুঁজি কেবল অর্থ উত্পাদনকারী সম্পদ— যেমন ব্যাংক হিসাব, স্টক কিংবা শিল্প-কারখানার প্লান্ট নয়; শিক্ষা অর্জন, প্রশিক্ষণও বড় পুঁজি। কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মতে, শিক্ষা হলো সবচেয়ে বড় অস্ত্র যা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। আমেরিকার আজকের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার পেছনে উচ্চ মানসম্মত শিক্ষা সর্বাধিক অবদান রেখেছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর— প্রাকৃতিক সম্পদবিহীন এ দেশগুলো উন্নত দেশ হয়েছে উচ্চ মানব সম্পদ সৃষ্টি করে। একসময় ছিল যার সামরিক শক্তি যত বেশি সেই রাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বর্তমানে অর্থনৈতিক শক্তি সামরিক শক্তির স্থান দখল করেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তিটা কোথায়? জ্ঞান, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও গবেষণা যে অর্থনৈতিক শক্তির বুনিয়াদ সে বিষয়ে আজ দ্বিমত নেই। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার ’৮০-এর দশকের শেষভাগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন যা ‘এন্ডোজেনাস গ্রোথ থিওরি’ নামে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুসারে প্রবৃদ্ধির নিয়ামক বাহ্যিক কোনো শক্তি বা দেশজ সম্পদ নয় বরং মানব পুঁজি। উদ্ভাবনে, জ্ঞান বা শিক্ষায় বিনিয়োগই এর অন্যতম অনুঘটক।
মানব উন্নয়ন সূচকেরও অন্যতম সূচক হলো শিক্ষা। কিন্তু এখন শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার মান অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে গুণগত শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত অভীষ্ট-৪ বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। সেখানে সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এ শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যতে বলা হয়েছে— “সর্বক্ষেত্রে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উত্সাহী করা এবং মৌলিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণার সাথে সাথে দেশের জন্যে প্রয়োজনীয় গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা”। একথা সত্য যে, উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও প্রবৃদ্ধির জন্য শিক্ষা, বিজ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতা অপরিহার্য। বর্তমানে ‘জ্ঞান অর্থনীতি’ তাই উন্নয়ন কৌশলের অন্যতম অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মানব উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে।
সত্য যে, বাংলাদেশ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষায় প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। উন্নয়নের এই ধারাকে বেগবান করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রতিভাত। শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ আশানুরূপ হয়নি। মাদ্রাসা শিক্ষা মূলধারার শিক্ষা থেকে আলাদা রয়ে গেছে। দক্ষতা উন্নয়নে কিছুটা অগ্রগতি হলেও তা এখনো পিছিয়ে আছে। প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট ফারাক আছে। আমাদের শিক্ষার আরো একটি বড় সমস্যা হলো বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার সাথে শিল্পের বা উত্পাদন খাতের যোগাযোগের অভাব। আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা আছে: “দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য শিক্ষাকে সৃজনধর্মী, প্রয়োগমুখী ও উত্পাদন সহায়ক করে তোলা; শিক্ষার্থীদেরকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশে সহায়তা প্রদান করা”।
শিক্ষা-সম্পর্কিত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হলো: প্রাথমিক শিক্ষা (১) সারাদেশে প্রতিটি শিশুকে শিক্ষা কর্মসূচির মূলধারায় আনা, (২) শিক্ষকদের ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ, (৩) বিদ্যালয় এবং শ্রেণিকক্ষভিত্তিক মূল্যায়ন পরিচালনা করা, (৪) সকল ধরনের বিদ্যালয়ে সব শিশুদের মানসম্পন্ন পাঠ্যবই প্রদান, (৫) অডিও-ভিজুয়াল উপকরণসহ সব বিদ্যালয়ে আইসিটি চালু করা, (৬) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্রম এবং শিক্ষণ বিজ্ঞানে মান উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা; (৭) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষা; (৮) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি, (৯) সকল বিদ্যালয়কে সামাজিক গতিময়তার সঙ্গে যুক্ত হতে উত্সাহিত করা, (১০) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ১০০% উপবৃত্তি প্রদান, (১১) সকল শিক্ষার্থীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্কুল ফিডিং কর্মসূচি সম্প্রসারণ। শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত বিষয়গুলো খুবই প্রাসঙ্গিক। আবার মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হলো: (১) ভর্তি হার বৃদ্ধি, (২) পঠন, লিখন, শ্রবণ এবং কথন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, (৩) ঝরে-পড়ার হার হ্রাস, (৪) নারীদের ভর্তিতে উত্সাহিতকরণ, (৫) উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হলো: (১) উচ্চ শিক্ষার হার ১২ শতাংশ হতে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ; (২) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান ও গুণগত বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি; (৩) পরিমাণগত সম্প্রসারণ কাঙ্ক্ষিত মানের হলেও গুণগত বৈশিষ্ট্যে কোনো আপস নয়; (৪) বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংহতকরণ ও শক্তিশালীকরণ; (৫) গুণগত বৈশিষ্ট্য, নিয়োগে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা এবং মেধার ওপর গুরুত্বদান; (৬) কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিতকরণ— বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যবসা প্রশাসন এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে উচ্চ অগ্রাধিকার দান; (৭) গবেষণা ও প্রশিক্ষণে জোর দেয়া; (৮) ভার্চুয়াল শিক্ষা প্রবর্তন; (৯) লাইব্রেরি ও গবেষণাগার উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ।
শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে ফাঁক রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করা যায়। যেমন-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ক্ষেত্রে এখনো বড় সমস্যাগুলো হলো ঝরে পড়া, তুলনামূলক কম শিক্ষণীয় দক্ষতা, অপর্যাপ্ত কাঠামোগত সুবিধাদি, শিক্ষকদের কম দক্ষতা, দুরগম্য এলাকায় দরিদ্র শিশুদের প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক পর্যায়ে কম অভিগম্যতা। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ফারাকগুলো হলো—ভর্তির ক্ষেত্রে হার মাত্র ১২ শতাংশ, সাধারণ শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্বারোপ, দুর্বল শিক্ষণীয় দক্ষতার সাথে কম কর্মসংস্থান উপযোগিতা, বিজ্ঞান ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার উপর কম গুরুত্বারোপ, অপরাজনীতির বিস্তার, পর্যাপ্ত ভৌত অবকাঠামোর অভাব। এগুলো এখনো প্রবল বিরাজিত সমস্যা— যা শিক্ষার বিস্তার ও গুণগত শিক্ষা প্রদানে বাধা হয়ে আছে।
মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো হলো— দুর্বল মান এবং জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে কম সম্পৃক্ততা, অপর্যাপ্ত ভৌত সুবিধাদি, শিক্ষকদের কম দক্ষতা। এক্ষেত্রে বয়স্ক শিক্ষা ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে। ৩৯ শতাংশ বয়স্ক নারী এবং ৩২ শতাংশ বয়স্ক পুরুষ নিরক্ষর রয়েছে এমডিজিতে অনেক সাফল্য অর্জনের পরেও। এছাড়া গ্রামীণ মহিলাদের ৪৫ শতাংশ নিরক্ষর, এ সংখ্যা এখনো বিশাল। অপর্যাপ্ত সুবিধাদি এবং প্রশিক্ষকের অভাব রয়েছে।
দক্ষতা উন্নয়নে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ শ্রমশক্তির কোনো শিক্ষা নেই, ২৬ শতাংশের শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা আছে, ৩১ শতাংশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা আছে, কিন্তু মাত্র পাঁচ শতাংশের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষা রয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণের সাথে বাজার চাহিদার সামঞ্জস্য খুব কম। বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে অপর্যাপ্ত সুবিধাদি ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি তেমন নয়। সবচাইতে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো গবেষণা উন্নয়নে আমাদের ব্যয় খুব সীমিত যা আমাদের দেশজ আয়ের মাত্র ০.৬ শতাংশ। এ ব্যয় নগণ্য। এ ব্যয় অন্তত এক শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে কিভাবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জন করা যায় এবং টেকসই উন্নয়নের অভীষ্টকে সামনে রেখে গুণগত শিক্ষা অর্জনের ভিত্তি স্থাপন করা যায় সেটিই এখন উন্নয়ন ভাবনা। প্রাথমিক শিক্ষায় ১০০ শতাংশ তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে সকল বিদ্যালয় এলাকায় শিশুদের ১০০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে; ঝরে পড়ার হার (যা ২০ শতাংশ) কমাতে হবে; দূরগম্য এলাকার শিশুদের স্কুলগামী করার মাধ্যমে বৈষম্য দূর করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্য বিদ্যালয়ে শিক্ষণ পদ্ধতির উন্নতি ঘটাতে হবে; বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
অপরপক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য মেয়েদের এবং ভৌগোলিকভাবে পশ্চাত্পদ এলাকার ছাত্রদের ভর্তি বাড়াতে হবে। এছাড়া শিক্ষা অবকাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপবৃত্তির পরিমাণ ও হার বাড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতার বিকল্প নেই। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পর্যালোচনা করতে হবে। সর্বোপরি ছাত্রদের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নতি সাধন করা দরকার। তাছাড়া মাধ্যমিক স্কুল ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা থেকে মুক্তকরণ, ছাত্র অভিভাবক কমিটি শক্তিশালীকরণ, স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষকদের নিয়োগ নীতি অনুসরণ জরুরি। কেবল সরকার নয় মানসম্মত শিক্ষার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে দরকার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন; চাকরির বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাঠ্যক্রমের সংশোধন; ছাত্রদের শিক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নতিকরণ; তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির অভিগম্যতা বাড়ানো; শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি। কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষত প্রকৌশল শিক্ষায় আমাদের অংশগ্রহণ আরো জোরালো করা দরকার।
উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত মান বৃদ্ধি, ছাত্রদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, উচ্চ শিক্ষায় ব্যবস্থাপনা উন্নীতকরণ, গবেষণা ও শিক্ষায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পুনর্গঠন ও ক্ষমতায়িত করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ, কিশোর ও যুবকদের জন্য আলাদা কর্মসূচি তৈরি, জনসমাজ ভিত্তিক শিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, ফলপ্রসূ দক্ষতা প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি, বেসরকারি সংস্থাসমূহের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড গঠন এ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। বিশেষত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা, খাতভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা সংস্থা সংস্কার ও ফলাফলভিত্তিক কর্মসম্পাদন, মূল্যায়ন, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে উত্পাদনশীলতার সাথে সংযোগ স্থাপন করা প্রয়োজন।
নিম্ন মধ্যম আয় থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৪ অর্জন করতে পারলে তা আমাদের অন্যান্য লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়ক হবে। শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যের ও পুষ্টির উন্নতি এবং শিল্পায়ন ও উদ্ভাবন সম্ভব হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ ব্যতীত উন্নত দেশ হওয়ার বাসনা পূরণ হওয়া অসম্ভব হবে। শিক্ষাখাত ও অর্থনীতিতে জরুরি সংস্কারসমূহ সম্পন্ন না করে কেবল প্রথাগতভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির হার দুই অংকে নেওয়া যাবে মনে হয় না।
লেখক: অধ্যাপক (অবঃ) ও অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: ইত্তেফাক