অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিচারকাজে অংশ নেওয়া যাবে - দৈনিকশিক্ষা

অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিচারকাজে অংশ নেওয়া যাবে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরুর জন্য ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এখন থেকে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সাক্ষীদের ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলার শুনানি করা যাবে। এক্ষেত্রে অনুসরণীয় ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’য় বলা হয়েছে, আদালত কক্ষ থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে অবস্থানরত মামলার কোনো পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং মামলা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অডিও-ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে মামলায় উপস্থিতি, সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানিসহ সব বিচারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এতে দেশের বাইরে থেকেও মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন করার প্রায় তিন বছর পর অধস্তন আদালতে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানির পথ সুগম হলো এই প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারির মাধ্যমে। এতে করে মামলার যে কোনো পক্ষ তার সুবিধামতো শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জবানবন্দি গ্রহণকারী বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সাক্ষীরা তাদের অফিসে বসেই সাক্ষ্য দিতে পারবেন। এতে করে একদিকে সরকারি সাক্ষীদের টিএ-ডিএ বাবদ লাখ লাখ টাকার খরচ যেমন বন্ধ হবে, তেমনি সময়েরও অপচয় রোধ হবে।

জানা যায়, সরকার করোনাকালে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুলাই আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ পাস করে। পরবর্তী সময়ে এটি সংসদে আইন আকারে পাস করা হয়। আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ৫ ধারার অধীনে জারিকৃত প্র্যাকটিস নির্দেশনা সাপেক্ষে অডিও, ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষের বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে যে কোনো মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় প্রদান করতে পারবে। ৩ (২) উপধারায় বলা হয়, উপধারা ১-এর অধীনে অডিও, ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষের বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। অধ্যাদেশের ৫ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগ থেকে প্র্যাকটিস নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হয়।

আইনটি পাসের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি, দেওয়ানি কার্যবিধি এবং সাক্ষ্য আইনসহ অন্যান্য আইনে বলা আছে বিচারকার্য চলাকালে বিচারক, আইনজীবী, আসামিসহ সংশ্লিষ্টদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। এখন ভার্চুয়ালি উপস্থিত হলেই সশরীরে উপস্থিতি হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে সাক্ষ্য আইন সংশোধনের পর এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে। তখন বিচারিক আদালত এই মাধ্যম ব্যবহার করে বিচার, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনতে ও রায় দিতে পারবেন। এর আগে এই অধ্যাদেশে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রধান বিচারপতি প্র্যাকটিস ডিরেকশনের মাধ্যমে কার্যবিধি নির্ধারণ করে দিলে অন্যান্য মামলার শুনানি—যেমন জামিন শুনানি করতে পারবেন। সে অনুযায়ী করোনাকালে শুধু আসামিদের জামিন শুনানিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। এরপর গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো সাক্ষ্য আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়। বিচারেও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়। তবে আইন পাসের পর প্রায় এক বছর পার হলেও প্র্যাকটিস নির্দেশনা না থাকায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে অধস্তন আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

এ অবস্থায় গত রোববার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে প্র্যাকটিস নির্দেশনার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন-২০২০-এর ৫ ধারার ক্ষমতাবলে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ জারি করেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের পদ্ধতি :

নির্দেশনার ৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, মামলা সংশ্লিষ্ট পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞের আবেদনক্রমে বা আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে যে কোনো মামলার যে কোনো পর্যায়ের কার্যক্রম অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। ৫(২) ধারায় বলা হয়েছে, এরূপ আবেদন প্রাপ্তি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানির পর, আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন যে, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এক্ষেত্রে আবশ্যিক কি না। আবেদন মঞ্জুর করা হলে আদালত অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের সময়সূচি নির্ধারণ করবেন।

৫(৩) ধারায় বলা হয়েছে, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের আবেদনে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিতি শুনানি অথবা সাক্ষ্য গ্রহণের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শনাক্তকরণের সুবিধার্থে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, টেলিফোন নম্বর, ইমেইল আইডি সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। জেলহাজতে আটক অভিযুক্ত বা সাক্ষীর ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।

প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা :

অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দেশনার ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, আদালত প্রান্তে একজন এবং দূরবর্তী প্রান্তে একজন সমন্বয়কারী থাকবেন। আদালত প্রান্তে আদালত নিজে অথবা আদালত থেকে মনোনীত একজন সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবেন। এ ছাড়া দেশের বাইরে বাংলাদেশি সংশ্লিষ্ট কনস্যুলেট/ দূতাবাস/হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা, কারাগারে সংশ্লিষ্ট জেল সুপারিনটেনডেন্ট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত কোনো কর্মকর্তা, নিরাপদ স্থান (সেফ হোম), প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা যে কোনো প্রতিষ্ঠান যেখানে ‘আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু’ বা ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু’ কে রাখা হয় বা হয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা, লিগ্যাল এইড অফিস কর্তৃক মনোনীত কোনো লিগ্যাল এইড অফিসার, ফরেনসিক ল্যাবরেটরির সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোনীত কর্মকর্তা এবং অন্য যে কোনো স্থানে আদালত থেকে মনোনীত যে কোনো ব্যক্তি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতি প্রয়োজন এমন কোনো ব্যক্তি যখন এমন কোনো দূরবর্তী প্রান্তে থাকে—যেখানে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সুবিধাগুলো অনুপস্থিত, তখন সংশ্লিষ্ট আদালত দূরবর্তী প্রান্তের স্থানীয় এখতিয়ারসম্পন্ন জেলা জজকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করবেন নিকটবর্তী এবং উপযুক্ত স্থান থেকে একটি অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য। আদালত প্রান্ত এবং দূরবর্তী প্রান্ত উভয় প্রান্তের সমন্বয়কারীরা নিশ্চিত করবেন যে, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সময় প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে। দূরবর্তী প্রান্তের সমন্বয়কারী নিশ্চিত করবেন, কনফারেন্সিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে দূরবর্তী প্রান্তে প্রস্তুত হয়েছে; কোনো অননুমোদিত রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে না; অডিও-ভিডিও কনফারেন্স চলাকালীন কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করবে না। যে ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাকে কোনো ভাবে প্ররোচিত করা, টিউটর করা, বাধ্য করা হয়নি এবং যে ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাকে কনফারেন্স চলাকালীন সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো নথি, স্ক্রিপ্ট বা ডিভাইস দেখানো হয়নি। আদালত অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সময়সূচি নির্ধারণ করে নোটিশ দেবেন এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে দূরবর্তী প্রান্তে সমন্বয়কারীর অফিসিয়াল ইমেইল অ্যাকাউন্টে মামলার কাগজপত্রের প্রয়োজনীয় অংশের স্ক্যানকপি পূর্বেই পাঠিয়ে দেবেন।

নির্দেশনায়, আদালত প্রান্ত এবং দূরবর্তী প্রান্তে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ডিভাইস এবং প্রিন্টার; নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ডিভাইস; মাইক্রোফোন এবং স্পিকার; ক্যামেরা; প্রদর্শন ইউনিট; গোপনীয়তা নিশ্চিত করে পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা: পর্যাপ্ত আলো; একটি শান্ত এবং নিরাপদ স্থানের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066418647766113