নওগাঁর রাণীনগরের আবাদপুকুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে ৩২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সব শিক্ষক-কর্মচারীর পক্ষে মো. আইয়ুব আলী নামের এক শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, আবাদপুকুর মহাবিদ্যালয়ে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ের চাকবি প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ জিএম মাসুদ রানা জুয়েল ও সদ্যবিদায়ী সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাবলু।
আওয়ামী লীগের এই দুইজন প্রভাবশালী নেতা মিলে গত ২৪ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ ও কলেজ ফান্ডের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার ভুয়া নিয়োগ বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, কোন কোন পদে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে আগের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নতুন করে বেশি অর্থ নিয়ে চাকরি প্রদান করেছেন। ডিগ্রি পর্যায়েও একই অবস্থা। কলেজের প্রভাষক আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার, নিরাঞ্জন কুমারের কাছ থেকে ৪০ হাজার, জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ৩ লাখ ১৬ হাজার, মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ৫ লাখ, রশিদুল ইসলামের কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার, আবু তারেক সরদারের কাছ থেকে ৫০ হাজার, প্রদর্শক এমদাদুল আলমের কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার, তপন কুমার মহন্তের কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার, হিরেন্দ্রনাথের কাছ থেকে ৩৭ হাজার, মঞ্জুরুল হকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও অফিস সহকারী হামিদুল ইসলামের কাছ থেকে কলেজের জন্য ১০ শতাংশ জমি গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডিগ্রি পর্যায়ে প্রভাষক মাহবুবের কাছ থেকে ৪ লাখ, আনোয়ারুল হকের কাছ থেকে ৩ লাখ, রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৪ লাখ, শের এ গোলামের কাছ থেকে ৩ লাখ, প্রার্থ নাথের কাছ থেকে ২ লাখ ও আবু সাইদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এনটিআরসি কর্তৃক যে সকল শিক্ষক কলেজে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে জোর করে কলেজের ফান্ডের কথা বলে অধ্যক্ষ লাখ লাখ টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগকারী প্রভাষক মো. আইয়ুব আলী বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এই দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়নি। আমরা ভুক্তভোগী সবাই অসহায় মানুষ তাই আমাদের প্রদেয় টাকা দ্রুত ফেরতের আশা বুকে নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা আশাবাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত অভিযোগের ভিত্তিতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবেন এবং দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।
এ বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ মাসুদ রানা জুয়েলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সদ্যবিদায়ী সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি সম্পন্ন মিথ্যে। আমি আর্থিক বিষয়টি কখনো নিয়ন্ত্রণ করিনি। যাবতীয় আর্থিক বিষয়টি অধ্যক্ষ নিজেই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তবে ডিগ্রি পর্যায়ে কিছু অর্থের বিনিময় হয়েছে যা কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাইমেনা শারমীন বলেন, এমন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।