দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে এক অধ্যাপককে গ্রেফতারের সময় তার পাঁজরের বেশ কয়েকটি হাড় ও একটি হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। মিসৌরির সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে হামলার শিকার স্টিভ তামারি সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ। খবর হিন্দুস্থান টাইমস, এপি।
স্টিভ তামারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সেন্ট লুইস কাউন্টি পুলিশের কয়েকজন অফিসার আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে টেনে-হিঁচড়ে গ্রেফতার করেছিল। পুলিশের বর্বরতার ফলে, আমি এখন একাধিক ভাঙা পাঁজর এবং একটি ভাঙা হাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন ডাক্তার আমাকে বলেছেন, ভাগ্যবান বলেই আমি বেঁচে আছি। আমার ফুসফুস ফেটে যেতে পারত। তারা আমাকে নির্যাতনের পাশাপাশি গালাগাল করেছে। আমাকে মাটিতে আছড়ে ফেলেছে। এতে আমি মারাও যেতে পারতাম।’
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের ঘটনায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, শনিবার (২৭ এপ্রিল) স্টিভ তামারি মূলত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে বেপরোয়াভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যান।
ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, গ্রেফতারের সময় অধ্যাপক তামারি মাটিতে পড়ে গেলে পুলিশ তাকে হাঁটু দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। পরে দুই হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর কয়েকজন পুলিশ তার নিস্তেজ হয়ে পড়া শরীর টেনেহিঁচড়ে একটি ভ্যানের দিকে নিয়ে যায় ও মাটিতে তাকে উপুড় করে ছুড়ে ফেলে।
বিক্ষোভ চলাকালে অধ্যাপক তামারির স্ত্রী সান্দ্রা তামারিকেও পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সোমবার সান্দ্রা একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ৬৫ বছর বয়সি স্টিভ তামারিকে পুলিশ নৃশংসভাবে পিটিয়েছে। তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার ব্যথা রয়েছে ও ভাঙা হাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। পোস্টে সান্দ্রা আরও লিখেছেন, তখন তারা কোনো গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন না। তিনি আরও লিখেছেন, সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ নিজেদের শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি, স্টাফের বিরুদ্ধে সহিংস পন্থা অবলম্বন করেছে। তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সেন্ট লুইসের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে।
এ ঘটনায় একাডেমিক প্রকাশনা ‘দ্য মিডল ইস্ট রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন প্রজেক্ট’ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, এমইআরআইপির নেতা ও কর্মীরা অধ্যাপক তামারির ওপর হামলা এবং তাকে গ্রেফতারের ঘটনা শুনে আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। ইতঃপূর্বে অধ্যাপক তামারি ও তার স্ত্রী দুজনই এ প্রকাশনায় কাজ করেছেন।
এমইআরআইপি বলেছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশের সহিংসতা দুই সপ্তাহ ধরে উদ্বেগজনক প্রবণতা হয়ে উঠেছে। কিন্তু স্টিভের সঙ্গে যা করা হয়েছে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ের সহিংস আচরণ। আমরা পুলিশের নিষ্ঠুরতা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আচরণের নিন্দা জানাই।’