রাত যত গভীর হয় শীতের তীব্রতা তত বেশি অনুভূত হয়। মশার উপদ্রবও বেড়ে যায়। আর পথের পাশের ধূলা তো রয়েছেই। মশার ওষুধ বা কয়েল ব্যবহার করেন না তারা। কারণ, তাঁরা তো এমপিওর দাবীতে আমরণ অনশনে। দাবী আদায়ে যারা মরার জন্য প্রস্তুত তাদের কাছে শীত আর মশা নস্যি! এমপিওর দাবিতে অনশনের প্রথম দিন এভাবেই অতিবাহিত হয় শত শত মানুষ গড়ার কারিগরদের। অসুস্থ হয়ে পড়েন ৪২ জন। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল নয়টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। আজ দ্বিতীয় দিন। সোমবার সকাল সাতটায় দেখা যায় শত শত শিক্ষক শীতে জুবুথুবু হয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে ২৬ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মানুষ গড়ার এ কারিগররা। দাবি না মানায় অনশন শুরু করবেন তারা।
দৈনিকশিক্ষার এক প্রশ্নের জবাবে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয়ভূষণ রায় বলেন, এমপিও ছাড়া বাড়ী ফিরবো না। মরার জন্য প্রস্তত আমরা।
তিনি বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন জমা দিয়েছি। অনশন চলাকালে মৃত্যুর খবর শোনার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেবেন। গত শনিবার জেএসসি-জেডিসির ফল ঘোষণা করা হয়েছিল। যার কৃতিত্বের দাবিদার শিক্ষকরাও ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা আনন্দ ভাগ করে নিতে পারেননি।’
অনশন কর্মসূচির শুরুতে এমপিওভুক্তির ঘোষণা না আসা পর্যন্ত শিক্ষকরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য কামনা করে শপথবাক্য পাঠ করেন। ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার এ শপথ পাঠ করান। তিনি বলেন, ‘টানা পাঁচ দিন ধরে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কর্তাব্যক্তির আশ্বাস বা সহানুভূতি পাননি। বরং ৩০ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এমপিএভুক্তি করা হবে, যা তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ বিগত কয়েক বছর শিক্ষামন্ত্রী একই কথা বলে আসছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। মৃত্যু হলেও হাসিমুখে বরণ করে নেব। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’ বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশনে অন্তত ৪০ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ গোলাম মাহামুদুন্নবী ডলার বলেন, আমরণ অনশনের প্রথম দিন কেটেছে ভালোই।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাক সারা দেশ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা এসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
অনশনের প্রথম দিন রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সামিনা লুৎফা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক রাখাল রাহা এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এস.এম.এইচ সাইফুল ইসলাম (শাহাদত)।