অনিয়মের অভিযোগে বরগুনার পাথরঘাটা কলেজে অধ্যক্ষ, ল্যাব সহকারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্রথম
পাথরঘাটা কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য ও পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পাথরঘাটার ইউএনও সুফল চন্দ্র গোলদারের কাছে গতকাল বিকেলে লিখিত অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে আজ সকালে ইউএনও সুফল চন্দ্র গোলদার প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয় খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাথরঘাটা কলেজ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা কলেজে অধ্যক্ষ পদে একজন (শূন্যপদ), প্রভাষক পদে পাঁচজন (সৃষ্টপদ), ল্যাব সহকারী চারজন (সৃষ্টপদ) ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে (সৃষ্টপদ) একজনের জন্য ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলোতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে পাথরঘাটা কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন পাথরঘাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে চারটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে একটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সর্বশেষ ওই বিজ্ঞপ্তিতে একটি আবেদনও আসেনি। কিন্তু প্রথম বিজ্ঞপ্তির ওই পাঁচটি পদের মধ্যে প্রভাষক পদ বাদে অধ্যক্ষ, ল্যাব সহকারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি না মেনে গত বছরের ৩০ আগস্টের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেয়া হয়। সে অনুযায়ী, আজ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এই নিয়োগ পরীক্ষার তিন দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেনের চাকরির শেষ কর্মদিবস। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসরে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের অবসরে যাওয়ার মাত্র চার দিন আগে তড়িঘড়ি করে পাথরঘাটা কলেজের নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এ নিয়োগে অধ্যক্ষ, ল্যাব সহকারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিটি পদে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছিল। তবে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না।
অভিযোগের বিষয়ে আজ দুপুরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘যে অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। তা ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করতে কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি গণবিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন না। বিষয়টি আমাকে জানালে আমরা পদপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মুঠোফোনে জানিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করতে পারতাম। তবে মোট অঙ্কের লেনদেনের বিষয়টি ঠিক নয়।’
পাথরঘাটা কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য ও পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার তিন দিন আগে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করে মোট অঙ্কের টাকা নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছিলেন। তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে সবকিছু গোপনে করে যাচ্ছিলেন। ঘটনাটি টের পেয়ে তারা কলেজ কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেন। তা ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষাটি কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হচ্ছে, সেটাও স্পষ্ট নয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
সূত্র : প্রথম আলো