জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নানাবিধ অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চলেছে দীর্ঘকাল। এ সময়ে নানা অসত্য বিবরণী ও বক্র উপস্থাপনা সামনে এনে তাকে হেয় করার পাশাপাশি মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়। ইতিহাসের দাবি অনুযায়ী এসবের মূলোৎপাটন দরকার। ধারাবাহিক ইতিহাস চর্চার সুযোগ অবারিত থাকলেই একমাত্র আনুপূর্বিক বিশ্লেষণ সহযোগে সূক্ষ্ম দিকগুলোতে আলো ফেলা সম্ভব, যা ১৯৯৬ সাল থেকে বিগত তিন দশক বিশেষ করে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে সম্ভব হয়েছে।
ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠতা ও যথার্থতা লালনে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা উল্লেখ করার মতো, যা জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় অনেক কিছুই বদলে গেলেও, এমনকি সেদিনের মিত্র পরবর্তীকালের প্রতিপক্ষ কিংবা পাকিস্তান সৃষ্টির/স্বপ্নভঙ্গ থেকে দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির চার দশক (প্রথম প্রকাশ ২০১২) অতিক্রান্ত হলেও প্রকাশকালে অবিকল রাখা হয়েছে বইটির বিবরণী। জাতির পিতার হত্যাকারীদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও হস্তান্তরে আপত্তি করলেও মুয়াম্মার গাদ্দাফীর সঙ্গে তার ছবিটি প্রদর্শনে আপত্তি করা হয়নি। অন্যদিকে জাতির পিতা ও পরিবারকে ইতিহাস বিকৃতি ও অপপ্রচারে বিদ্ধ করা হয়েছে বারবার। তা সত্ত্বেও ইতিহাসের প্রতি সত্যনিষ্ঠ এ পরিবারটির সুরক্ষা মিলেছে ইতিহাসের অর্গলেই। তাই তাদের ইতিহাসকে পরিবর্তন, আড়াল বা আংশিক প্রকাশ করতে হয়নি কোনোদিনই। একটি উদাহরণ হতে পারে রক্ষীবাহিনীকে অধিক পৃষ্ঠপোষকতা, অপেক্ষাকৃত ওপরে স্থান দেওয়া কিংবা ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বহীন করার অপপ্রচারটি। রক্ষীবাহিনীর সামরিক সক্ষমতা সেনাবাহিনীর ধারেকাছেও ছিল না। ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল সেনাবাহিনীর অধিকারে। তাই এ প্রচারণার কোনোই ভিত্তি নেই। ১৯ জুন ১৯৮১ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরস্থ জাতির পিতার বাসভবনের প্রতিটি কক্ষই প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। ১২ জুন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। এর আগ পর্যন্ত নিজ বাড়িতে প্রবেশাধিকার না দেওয়ায় ১৫ আগস্টে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া ভবনসংলগ্ন ফুটপাতেই আয়োজন করতে হয়েছিল। সাংবাদিকদের পরিদর্শনকালে বাড়িতে থাকা জায়নামাজ দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, খন্দকার মোশতাকের দাবি ছিল এ বাড়িতে কোনো জায়নামাজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আপনারা নিজের চোখেই দেখুন (কী নিদারুণ মিথ্যাচার!)। সাংবাদিকদের বাড়িটি দেখানোর সময় শেখ হাসিনা বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
খুব প্রচলিত ধারণা হলো, জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতারোহণকারী খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে দৃশ্যত সমর্থন দেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেন। প্রকৃতপক্ষে, ১৫ আগস্টে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে ছিলেন না। রাষ্ট্রদূত সমর সেন সড়কপথে ১৬ আগস্ট বাংলাদেশে ঢোকেন। ১৮ আগস্ট তিনি বঙ্গভবনে যান। একটি কাগজ হাতে সমর সেনকে খন্দকার মোশতাকের সকাশে দেখা যায়। কাগজে লেখা ছিল: যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন বা কোনো দেশের [পাকিস্তান] সঙ্গে কনফেডারেশন করা হয়, তাহলে ভারতের থাকা বৈধতার আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। মোশতাক দাঁড়ানো থাকাবস্থায়ই ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তার কূটনৈতিক নোট পড়ে শোনান। মোশতাক এরপর বিমর্ষমুখে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। এটা মানস ঘোষ, সম্পাদক, দ্য স্টেটসম্যান, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১১-এ প্রকাশিত নিবন্ধে খন্দকার মোশতাকের জনসংযোগ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারতে আবারও শরণার্থীর ঢল নামবে কিনা তা নিয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগও ছিল। অর্থাৎ জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবলুপ্তির আশঙ্কা করেই ভারত সেদিন কূটনৈতিক নোট পাঠায়। অধিকন্তু, মুক্তিযুদ্ধের এ পরম মিত্র দেশটি ১৫ আগস্ট তাদের স্বাধীনতা দিবস পৃথিবীর সর্বত্রই ভারতীয় দূতাবাসে আড়ম্বরপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য উদযাপনের আয়োজন করলেও বাংলাদেশে কোনো আনন্দসূচক কর্মসূচি নেয় না।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন মহান গণতন্ত্রী ও মুক্তিকামী মানুষের বৈশ্বিক নেতা। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে ৩০ অক্টোবর ১৯৭৪-এ ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমি সব যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হই, কারণ আমি ভুট্টোকে সাহায্য করতে চেয়েছি। আমি যদি এর অন্যথা করতাম, তাহলে সামরিক বাহিনী আবার পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নিতো।’ অথচ জুলফিকার আলী ভুট্টো মুজিব সরকার উৎখাতের সহযোগী ও অর্থায়নকারী। তার জীবনীকার স্ট্যানলি উলপার্ট, জুলফি ভুট্টো অফ পাকিস্তান গ্রন্থে বাংলাদেশে মুজিববিরোধী রাজনৈতিক দলকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করার কথা স্পষ্ট করেছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভকে বাধাগ্রস্ত, জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভকে বিলম্বিতসহ মুজিব হত্যাকাণ্ডে মদদ দিয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ ভুট্টো ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়া প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে কিসিঞ্জারকে বলেন, বাংলাদেশে মুজিব সরকার উৎখাত হবে। কিসিঞ্জার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করবে যোগ করলে ভুট্টো সহমত হন।
ইসলামাবাদ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হেনরি আলফ্রেড বাইরোড ১৮ আগস্ট এক তারবার্তায় লিখেছেন, একাত্তরে যে দ্বিজাতিতত্ত্বের মৃত্যু ঘটেছিল, তা আবার পুনর্জীবিত হওয়ায় ইসলামাবাদ আনন্দে আত্মহারা। ... জামায়াতে ইসলামির আধ্যাত্মিক নেতা মওলানা মওদুদী মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণকে ‘আল্লাহর আশীর্বাদ’ ও ‘ইসলামের বিজয়’ বলে বর্ণনা করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অনেক দেশ বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী সময়ে দ্রুত স্বীকৃতি দেয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের নামে স্বার্থোদ্ধারকারী নতুন সরকারকে স্থায়ী করা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কনফেডারেশন গঠনের চাপা পড়া স্বপ্ন নিয়ে বেশ খানিকটা অগ্রসর হয়ে পড়েন। তার নতুন সরকারকে দেওয়া শুভেচ্ছাবার্তা এরই ইঙ্গিতবহ। সেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম নিজেই বদলে তার মনগড়া মতো উল্লেখ করেন। মুক্তিযোদ্ধা নামধেয় খুনিরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পাকিস্তানের পুনরুত্থান চেয়েছিল-এটি উপলব্ধিতে আমাদের অতিশয় বিলম্ব হয়। যদিও নিকট অতীতে তাদের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল করা হয়েছে। খুনিচক্র ১৯৭২ সাল থেকেই মার্কিন দূতাবাসে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে যাতায়াত শুরু করে। ২১ ডিসেম্বর ১৯৭২ সিআইএ’র বাংলাদেশ প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার পরিবর্তন হবে এক আকস্মিক আঘাতে, মুজিবের উত্তরসূরি তার দল থেকেই আসবে। সিআইএ, এনআইসি ফাইলস, জব ৭৯ আর ০১০১২। এই ঘটনা থেকে এমনটা বলাই যায়, স্বাধীনতা লাভের প্রথম বছরেই ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব কিংবা প্রগলভ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের যে প্রয়াস নেয় খুনিচক্র, তা অনায়াসেই নাকচ হয়।
একটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত সদ্য স্বাধীন দেশে সহস্র সীমাবদ্ধতা আর সতত পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু সরকারকে মোটেই সময় দেয়নি দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা, তা বেশ বোঝা যায়। বরং প্রথম বছর থেকেই সরকার উৎখাতের চেষ্টা শুরু হয়। হেনরি কিসিঞ্জারের স্টাফ অ্যাসিস্টেন্ট রজার মরিসের একটি মূল্যায়ন প্রাসঙ্গিক। কিসিঞ্জার মনে করতেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় তার জন্য একটি ব্যক্তিগত পরাজয়। একজন নির্বাসিত, নির্যাতিত নেতা হিসাবে মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রতি ভয়ানক চপেটাঘাত। অন্যদিকে, জাতিসংঘের সে সময়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ডক্টর ভিক্টর এইচ উমব্রিখট মার্কিন সরকারের প্রতি খুনিদের আশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ এক চিঠিতে লেখেন : গত বারো মাস ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রণিধানযোগ্য উন্নতি ঘটেছিল। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত, রপ্তানি বৃদ্ধি ও ঘাটতিবিহীন বাজেটও ছিল। ছিল জনহিতকর কর্মসূচি, জনবান্ধব প্রশাসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তম অংশটিকে কেন নির্মূল করা হলো তা কোনোমতেই বোধগম্য নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বাপর প্রচারণা যে সর্বৈব মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্যমূলক, উমব্রিখটের চিঠির বিভিন্ন উর্ধ্বগামী সূচকের উল্লেখই সে ব্যাপারে আমাদের নির্দ্বিধ করে। কলকাতার যুগান্তর পত্রিকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টারকে মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে একটি সংবাদ ছাপা হয়। বোস্টারকে সিআইএর লোক হিসাবে গণ্য করা নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের উষ্ণতা লোপ পায়। ঢাকা ডেটলাইনে সংবাদটির শিরোনাম ছিল : ‘চিলির আসল খলনায়ক এখন ঢাকায়’ ; বিবরণীতে বলা হয়, চিলিতে আলেন্দের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর পটভূমি তৈরির সময় (১৯৭৩) বোস্টার ছিলেন সেখানকার মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স। ২২ আগস্ট ১৯৭৫ প্রাভদা পত্রিকার নিবন্ধে ১৫ আগস্টের ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। প্রাভদায় পর্যবেক্ষকের ছদ্মনামে প্রকাশিত নিবন্ধে সোভিয়েত অনুসৃত নীতির প্রকাশ ঘটে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের ওপর শ্রদ্ধাবনত আলোকপাতের পর উল্লেখ করা হয় বঙ্গবন্ধুর ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী ‘কসাইদের’ বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ‘বৈধ আক্রোশ’ (লেজিটেমেট ইনডিগনেশন) ছড়িয়ে পড়ছে। তার বিয়োগান্তক ঘটনায় সোভিয়েত জনগণ তীব্র শোক প্রকাশ করছে। আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনাটির একদিন পর ১৬ আগস্ট কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। ভারতীয় পত্রপত্রিকা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর প্রকাশ করে। এর কয়েকদিনের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সফররত মার্কিন সিনেটর টমাস এফ ইগলটনের কাছে ব্লিৎজ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু হত্যায় সিআইএ’র সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে প্রকাশিত নিবন্ধ চাঞ্চল্যকর বলে মন্তব্য করেন। বোম্বের বামপন্থি সাপ্তাহিক ক্ল্যারিটি ২৩ আগস্ট ১৯৭৫ প্রথম পৃষ্ঠায় নিবন্ধের শিরোনাম করে ‘বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে সিআইএ’।
ভারত মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নেয়নি। উল্লেখ্য, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেন বঙ্গভবনে মোশতাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি নোট ধরিয়ে অনুসরণের জন্য কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে থেকে চাপ দেন, যা বঙ্গভবন ভিন্নভাবে প্রচার করে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে বলেন : আমি রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা কিংবা রাজনৈতিক খুন, বিশেষ করে যারা তাদের জাতির জন্য বড় অবদান রেখেছেন, তাদের হত্যার ঘোরতর বিরোধী। ... শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে আমি গভীরভাবে শোকাহত। লঙ্কা সম সমাজ পার্টি সরকারের শরিক দলগুলোর অন্যতম ছিল। ১৮ আগস্ট তারা এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য নতুন শাসকদের সমালোচনা করে। শ্রীলংকার আথাথা নামিয় সংবাদপত্রে একইদিনে সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের ঘটনাবলিকে ‘নিষ্ঠুর এবং অমানবিক হত্যাযজ্ঞ’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। তারা নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করে মুজিব উৎখাতের ঘটনায় মার্কিন পিএল ৪৮০ তহবিল অর্থায়ন করে। পত্রিকাটি মনে করে : বাংলাদেশের ঘটনা দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করা ও এখানকার সরকার উৎখাতের সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ভুটান ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করে। খুনিদের আশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি নিজ দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরকে চিঠি দিয়েছিলেন। এদিকে ৬ নভেম্বর জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সম্ভবত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী) জার্মান সরকারকে অনুরোধ জানান খুনিদের আশ্রয় না দেওয়ার। ঢাকার জার্মান রাষ্ট্রদূত মি. রিটার একই সুপারিশ করেন তার দেশকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিকভাবে তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ হয় এবং অব্যাহত থাকে।
লেখক: আসিফ কবীর, মুজিববর্ষে মিডিয়া কনসালটেন্ট