ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিশু বিক্রি, গ্রেফতার ৫ - দৈনিকশিক্ষা

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিশু বিক্রি, গ্রেফতার ৫

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে ২২ দিন আগে অপহৃত তিন বছরের শিশু মো. সিদ্দিককে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকা ও গোপালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-২। এ ঘটনায় শিশু অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা পীযুষ দম্পতি ও শিশুটির ক্রেতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‍্যাব জানায়, সিদ্দিক নামে ওই শিশুকে অপহরণের পর বিক্রি করার জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয় অপহরণকারীরা। সিদ্দিকের নাম পাল্টে দুই লাখ টাকায় স্ট্যাম্প করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। 

গ্রেফতাররা হলেন- পিযুষ কান্তি পাল (২৯) ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), সুজন সুতার (৩২), পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) ও তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬)।

তাদের গ্রেফতারের পর শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে এসব কথা জানান র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ২৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যানের মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন মো. দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও তার ছোট ছেলে মো. সিদ্দিকসহ (৩) আরও ৭-৮ জন শিশু-কিশোর খেলা করছিল। এ সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সব শিশুকে চকলেট খাওয়ায়। এক পর্যায়ে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়েকে বলে ‌‘তুমি বাসায় চলে যাও আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দেব।’ শিশুটির বড় বোন যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বলে। আর ছোট ভাই তিন বছরের শিশু সিদ্দিককে বাজার থেকে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় হুমায়রা ভয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বাসায় চলে যায়।

আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ভুক্তভোগী শিশুর মা কাজ শেষে বাসায় এলে মেয়ে হুমায়রা বিষয়টি তার মাকে জানায়। তাৎক্ষণিক ভুক্তভোগীর মা তার স্বামীকে জানান এবং আশপাশে খোঁজা-খুঁজি করতে থাকেন। খোঁজা-খুঁজির করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা। পরে ২৯ এপ্রিল অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। জিডির পর থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অপহৃত শিশু উদ্ধারে তৎপর হয় র‍্যাব-২। 

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক বলেন, ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, পর্যালোচনা, বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে র‍্যাব-২ জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি পিযুষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। পিযুষ দম্পতি সুজন সুতার নামের ব্যক্তির মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে শিশুটিকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে। 

আনোয়ার হোসেন খান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রথমে সুজন সুতারকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া থানাধীন তাড়াসি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে সুজন সুতারের নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছ থেকে অপহৃত শিশু সিদ্দিককে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকার সাভার এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রটির মূলহোতা পীযুষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালকে গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতার পীযুষ দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক জানান, পীযুষ কান্তি পাল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালীন একটি স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে পীযুষ কান্তি পাল মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সালের মে মাসে মানবপাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলায় গ্রেফতারের পর তিনি কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে বের হন। 

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, পীযুষ ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সনাতনী উদ্যোক্তা ফোরাম’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন। গ্রেফতার সুজন সুতারের সঙ্গে ওই ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পালের পরিচয় হয়।

তিনি বলেন, পীযুষ পাল ও রিদ্ধিতা পাল বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করে থাকেন। ২৬ এপ্রিল পীযুষ কান্তি পাল সাভার এলাকা থেকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় আসেন। শিশু সিদ্দিককে রাস্তায় চকলেটের লোভ দেখিয়ে কোলে নিয়ে সিএনজিতে করে গাবতলী হয়ে সাভার তার বাসায় নিয়ে যায়। পরে ওইদিনই রিদ্ধিতা পাল সুজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আগারগাঁও আইডিবি ভবনের সামনে একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও পীযুষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দেন। শিশু সিদ্দিককে প্রনিল পাল নাম দিয়ে স্ট্যাম্প করে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সুজনের কাছে বিক্রি করে দেন।

প্রমাণস্বরূপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্ম সনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি দেন পীযুষ দম্পতি।  

সুজন সুতারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক জানান, সুজনের নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাসের স্ত্রীর বড় বোন বেবি সরকারের একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় তিনি পীযুষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালের কাছ থেকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে অপহৃত শিশু মো. সিদ্দিককে কিনে নেন। পরে ২৬ এপ্রিল রাতের বেলা সিদ্দিককে গোপালগঞ্জ দিয়ে আসেন।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029449462890625