দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে শ্রেণিকক্ষসহ আন্যান্য অবকাঠামো স্থাপন করা হয়নি দেশের আটটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য অফিসকক্ষ বরাদ্দ দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীর চাপ ক্রমেই বাড়ায় ভবিষ্যতে শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সঙ্কট আরো প্রকট হবে। সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৪৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল্যায়ন কমিটি পর্যালোচনা করে খরচের হিসাব বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্য করে ব্যয় পুনঃনির্ধারণের জন্য বলেছে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য থেকে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের অধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ৬৫০ জন। সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে দুই লাখ ৭১ হাজার ৪৫৩ জন শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যায়ে অধ্যয়নরত রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে এবং বেসরকারি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে মোট পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৯৮৭ জন শিক্ষার্থী আছে। এ ছাড়া এইচএসসি ভোকেশনাল পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছে ২০ হাজার ৯০২ জন এবং বিএম পর্যায়ে চার লাখ ৩১ হাজার ৩৬৪ জন। শর্ট কোর্স পর্যায়ে মোট তিন লাখ ৯ হাজার ৭৭৯ জনের বেশি শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীদের স্থান সঙ্কুলানের পাশাপাশি পাঠদানের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা, কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মানজনক দফতর নিশ্চিত করা, সর্বোপরি দেশের কারিগরি শিক্ষার মর্যাদা বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি করে নতুন ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রকল্পটি যাচাই করেছে ওয়ার্ল্ড ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।
জানা গেছে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদ্যমান আটটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানোসহ এসব প্রতিষ্ঠানে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীর সুষ্ঠু পাঠদানের সুযোগ সৃষ্টি করা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় দক্ষ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সৃষ্টির লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো। প্রকল্পের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হলো, ৮০ হাজার ৪৮০ বর্গমিটারের আটটি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র (অ্যাকাডেমিক ভবনের জন্য), শিক্ষা ও শিক্ষণ উপকরণ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়। প্রকল্পের মূল ব্যয় হবে অবকাঠামো বা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণে।
অধিদফতরের দেয়া খরচের হিসাব থেকে দেখা যায়, নির্বাচিত আটটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একটি করে ১০ তলা অ্যাকাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ করা হবে। অ্যাকাডেমিক ভবনে নতুন শ্রেণিকক্ষ, ওয়ার্কশপ বা ল্যাব, শিক্ষকদের কক্ষ ইত্যাদি তৈরি করার বিধান রয়েছে। যার প্রতিটি ভবনের মেঝের ক্ষেত্রফল ১০ হাজার ৬০ বর্গমিটার। সাতটি ভবনের প্রতিটির খরচ পড়বে ৪৯ কোটি টাকা করে। বাকি একটি ভবনের খরচ পড়বে ৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে মোট আটটি ভবন নির্মাণের জন্য খরচ পড়বে ৩৯২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এসব ভবনে সবধরনের আধুনিক সুবিধার পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি তলায় স্বতন্ত্র টয়লেট, রেলিং ও প্রয়োজনীয় র্যাম্প-সুবিধা থাকবে। ভবনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব বারান্দা ও নিরাপত্তাবাতি স্মার্ট বা অটোমেটেড হবে। সব ল্যাব বা ওয়ার্কশপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মজবুত কাঠের দরোজার পাশাপাশি ফায়ার রেটেড রোলিং শাটার ব্যবহার করা হবে। সব ল্যাব বা ওয়ার্কশপে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মোক ডিটেক্টরসহ অটোমেটেড অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করা হবে।
প্রকল্পের ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের শিক্ষা উইং বলছে, অ্যাকাডেমিক ভবন আর পিআইইউ অফিসের আসবাবপত্রের জন্য প্রস্তাবনাতে ১৮ কোটি ৯৬.৯১ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। কিন্তু অ্যাকাডেমিক ভবনের আসবাবপত্রের বিস্তারিত তালিকা ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদির ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণপূর্বক আটটি ইনস্টিটিউট-ভিত্তিক আসবাবপত্রের তালিকা সুনির্দিষ্ট এবং পৃথকভাবে ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। বিএফআইডিসির ২০১৭-১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং পিআইইউ অফিসের আসবাবপত্র ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ওই রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয় অপেক্ষা বাজারদর অনুসারে আসবাবপত্রের প্রাক্কলিত ব্যয় কম হলে বাজারদর অনুসারে আসবাবপত্রের ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে।