১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিলো ৫৮ বছর আর সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স ছিলো ৫৭ বছর। ১৯৭২ থেকে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অবসরের এই বয়সসীমা বহাল ছিলো। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে চাকরিতে প্রবেশের বয়স একবারে তিন বছর বৃদ্ধি সাপেক্ষে অবসরের বয়সও তিন বছর বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও সরকার প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে ৩০ বছর করলেও অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর করার পরিবর্তে মাত্র দুবছর বাড়িয়ে ৫৯ করেন।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের পর দীর্ঘ ৩৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে বর্তমানে ৭২ দশমিক ৩ বছর হয়েছে অথচ চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর যৌক্তিক বিষয়টি এখনো গৃহীত হয়নি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পরিসংখ্যান যদি দেখি তাহলে বলতে হয় গড় আয়ু বিবেচনায় বাংলাদেশের চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর অথবা কমপক্ষে ৬২ করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে আমরা উল্লেখ করতে পারি, যুক্তরাজ্যে, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়ামে, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ইত্যাদি ইউরোপীয় রাষ্ট্রে অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর।
আমেরিকায় অবসরের বয়সসীমা ৬৬। আইসল্যান্ড ও নরওয়েতে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। জাপানে ৬২ বছর। গড় আয়ু বেড়ে ৫৮ থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হলেও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করায় দেশ অভিজ্ঞ ও দক্ষ মানুষের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুস্থ, সবল, দক্ষ ও অভিজ্ঞ এসব মানুষের সেবা না নেয়া বিরাট এক জাতীয় অপচয় বিধায় যতো দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৬০-৬২ বছর করা আবশ্যক। সম্প্রতি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা সবার বয়স ৩২ বছর করা হয়েছে। সাধারণরা ৫৯ বছরে আবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা ৬০ বছরে অবসরে যান। তাই অবসরের ক্ষেত্রেও বৈষম্য নিরসন করে মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা উভয়ের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর করা হোক।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক, বগুড়া