ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বুধবার (১ মার্চ) হাইকোর্টের এ আদেশে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি ফুলপরী খাতুন ও তার পরিবার।
দুপুরে আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফুলপরী বলেন, ‘আমার ওপর তারা যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাতে অস্থায়ী বহিষ্কার নয় আমি তাদের স্থায়ী বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল চাই। তা না হলে ক্যাম্পাসে ফিরলে আমাকে মেরে ফেলার আশঙ্কা থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি হল পরিবর্তন করতে পারি। সেক্ষেত্রে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল বা খালেদা জিয়া যেকোনো একটিতে উঠতে পারি।’
ক্যাম্পাসে কবে ফিরতে চান জানতে চাইলে ফুলপরীর বলেন, ‘আমি পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পেলে এবং স্যাররা যখন জানাবেন তখনই ক্যাম্পাসে ফিরে যাবো।’
ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে পারবে কি-না এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান। এ ধরনের অপরাধীরা ক্যাম্পাসে আর না থাকুক সেটাই চাই আমরা।’
এর আগে ফুলপরী খাতুনের ওপর নির্যাতনের সত্যতা খুঁজে পান তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুদফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ আরও সাত-আট জন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ।
এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই মাঝে গত ১৮, ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কমিটির ডাকে মোট তিনবার পৃথকভাবে ক্যাম্পাসে এসে সাক্ষাৎকার দেন ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা।
২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে ঘটনার তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে ছাত্রলীগের গঠিত কমিটি। এছাড়া সোমবার হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।