অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - দৈনিকশিক্ষা

সনদ জালিয়াতির খবর চাপা দিতে ঘুষঅভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির

এনামুল হক প্রিন্স, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

কারিগরির সনদ জালিয়াতি ও অবৈধ সনদ বাণিজ্যের তদন্ত দ্রুত শেষ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। সবার আশা, যথাযথ তদন্তে ওই জালিয়াতিতে জড়িতরা উপযুক্ত শাস্তি পাবেন। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদেরও রেহাই দেয়া হবে না। 

এদিকে তদন্তকারী সংস্থা তদন্তকাজ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে সম্ভাব্য শাস্তি থেকে বাঁচতে অভিযুক্তরা যার যার মাধ্যমে জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাংবাদিকদের পক্ষেই তদবির হচ্ছে বেশি। অপরাধ বিবেচনায় না নিয়ে শুধু সাংবাদিক হওয়ার কারণে প্রভাবশালী কিছু সাংবাদিক অভিযুক্ত সাংবাদিকদের বাঁচাতে উঠপড়ে লেগেছেন। যদিও শুরুতে যাদের নাম এসেছিলো তদন্তের পর তাদের তালিকা বড় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের পাঁচতলায় ঘুষকাণ্ডে নাম আসা শিক্ষা সাংবাদিকদের একটি আস্তানাও অনুসন্ধানের আওতায় এসেছে। ওই ভবনের একজন জানিয়েছেন, ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর ওই অফিসে আর কেউ আসেন না। মাঝে মাঝে অপরিচিত ব্যক্তিরা এসে খোঁজখবর জানতে চান। কিন্তু তাদের পরিচয় জানা যায় না। অফিসটি ভাড়া নিয়েছেন ঘুষকাণ্ডে নাম আসা তিন শিক্ষা সাংবাদিকের একজন।   

প্রসঙ্গত, জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে গত ৩১ মার্চ রাতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামানকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর মহানগর পুলিশ জানায়, বিপুল সংখ্যক অবৈধ সার্টিফিকেট ও মার্কশিটসহ শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর পীরের বাগে তার বাসায় অবৈধ সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। আরো পড়ুন: ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে

পরদিন ১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের সই করা অফিস আদেশে শামসুজ্জামানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী তখন বলেন, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত বলে আমাদের ধারণা। জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

তারপর অবৈধ সনদ বিক্রির সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা তার তদন্ত শুরু হয়। সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সনদ্য বাণিজ্যের প্রমাণ পেয়ে তার স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর কিছু দিন পর সংবাদমাধ্যমে শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। মেধাবী ও গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তার লাগাতার জেরার মুখে অবৈধ সনদ বাণিজ্যের খবর চাপা দিতে ঘুষ নেয়া সাংবাদিকদের নাম প্রকাশ করেন শামসুজ্জামান। 

তিনি বলেন, খবর প্রকাশের হুমকি দিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের শিক্ষা রিপোর্টার শরীফুল আলম সুমন নিয়েছেন ৮ লাখ টাকা। দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষা সাংবাদিক নিজামুল হক নিয়েছেন ৬ লাখ। দৈনিক সমকালের শিক্ষা সাংবাদিক সাব্বির নেওয়াজ নিয়েছেন ৫ লাখ টাকা ঘুষ।

এছাড়া বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ডিবিসির মাহমুদ সোহেল সাড়ে ৪ লাখ, এশিয়ান টিভির জাকির হোসেন পাটোয়ারি ২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। অন্যান্য সাংবাদিকদের মধ্যে হাসমত বিভিন্ন সময়ে মোট ২ লাখ টাকা নিয়েছেন, রুবেল নামে আর এক সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা বলেও টাকা নিয়েছেন  বলে স্বীকার করেছেন কারিগরি বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট।

এছাড়াও এক শীর্ষ সাংবাদিক নেতা ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দাবি করে জিজ্ঞাসাবাদে শামসুজ্জামান আরো বলেন, এসব সাংবাদিক রিপোর্ট করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। তাদের টাকা দেয়ার পর রিপোর্ট হতো না। তারা অন্য সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করতেন।   

ওই ঘটনার পর দৈনিক কালের কণ্ঠ তাদের শিক্ষা রিপোর্টার শরীফুল আলম সুমন ও দৈনিক সমকাল তাদের শিক্ষা রিপোর্টার সাব্বির নেওয়াজকে শোকজ করে বলে জানা যায়। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। শিক্ষা সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব) বিবৃতিতে দিয়ে জানায়, ঘুষকাণ্ডে অভিযুক্ত সাংবাদিকরা তাদের সংগঠনের কেউ নয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সব অধিদপ্তর-বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযুক্ত সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতে শুরু করেন।

এদিকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর আরো কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে আরো কজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্ধান পায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অবৈধ সনদ তৈরির কারখানার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তদন্ত কাজ এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে আরো ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সনদ জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত আরো কিছু সাংবাদিকের নামও প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে। যারা তাদের পক্ষে জোর তদবির চালাচ্ছেন তাদের গতিবিধিও নজরে রাখা হচ্ছে। 

 

 শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

শিক্ষার্থীদের রাজাকার শ্লোগান লজ্জার: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের রাজাকার শ্লোগান লজ্জার: প্রধানমন্ত্রী কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত উপহার দিলেই এমপিওভুক্তি! - dainik shiksha উপহার দিলেই এমপিওভুক্তি! কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসির আরো ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী - dainik shiksha কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসির আরো ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাবির জরুরি বৈঠকে প্রভোস্ট কমিটির পাঁচ সিদ্ধান্ত - dainik shiksha ঢাবির জরুরি বৈঠকে প্রভোস্ট কমিটির পাঁচ সিদ্ধান্ত কোটার পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আজ - dainik shiksha কোটার পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আজ শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরছেন আজ - dainik shiksha শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরছেন আজ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057530403137207