নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে শান্তিনিকেতনের পৈতৃক বাড়ি থেকে উচ্ছেদে বিশ্বভারতীর নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিয়েছেন বিশ্বের প্রায় ৩০০ বিশিষ্ট ব্যক্তি।
এসব ব্যক্তিদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী, খ্যাতিমান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও রাজনীতিকেরা রয়েছেন। গত শুক্রবার পাঠানো চিঠিতে তারা অমর্ত্য সেনকে দেয়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নোটিশে আপত্তি জানিয়েছেন।
শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের পৈতৃক ১ দশমিক ৩৮ একর জমির মধ্যে ১৩ শতাংশ অবৈধ দখল বলে অভিযোগ করে আসছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সম্প্রতি বীরভূমের মহকুমা আদালত ৬ মের মধ্যে অমর্ত্য সেনকে ওই জমি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। এরপর অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী এ আদেশ স্থগিত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছেন।
অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে যারা ভারতের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছেন, তাদের মধ্যে আছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জর্জ আকেরলফ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে মাইকেল স্পেন্স ও জোসেফ স্টিগলিৎজের সঙ্গে অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
চিঠিতে আরো সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি, আমহার্স্টের ইমেরিটাস অধ্যাপক জেমস কে বয়েস, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা, হান্টসভিলের অধ্যাপক অ্যান্থনি ডি কস্টা, জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক জেনিন রজার্স, ইংল্যান্ডের ডুরহাম ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক বিভাস সাহা, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার স্কুল অব সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সেসের ফেলো অনিশ কুমার।
চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে আরো আছেন, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়েক, অধ্যাপক অলকা আচার্য, কলকাতার ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধ্যাপক অভিজিৎ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর এবং তৃণমূলের এমপি (রাজ্যসভা) জহর শংকর।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বভারতী প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আদেশ অনুসরণ করে ‘অবৈধ পদক্ষেপ’ নিয়েছে। এ পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে অধ্যাপক সেনের ‘মতাদর্শগত পার্থক্য’ প্রকাশ্যে আলোচিত হচ্ছে বলা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের একটি বেআইনি কর্মকাণ্ডের কোনো ব্যাখ্যাই দেয়া যায় না। এর সম্ভবত একমাত্র ব্যাখ্যা হলো, তিনি (বিদ্যুৎ চক্রবর্তী) ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে অধ্যাপক সেনের যে মতাদর্শগত মতপার্থক্য, সেই পার্থক্যকে পুঁজি করে তাঁকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করছেন। উপাচার্য অন্যায়ভাবে সরকারের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেই সঙ্গে নিজের অপকর্ম থেকে সরকারের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন।
গত এপ্রিল মাসে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ একটি উচ্ছেদ নোটিশ জারি করে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে শান্তিনিকেতনে তাঁর পৈতৃক বাড়ি ‘প্রতীচি’র ১৩ শতাংশ জমি খালি করতে বলে। উচ্ছেদের আদেশের বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেনের আইনজীবীরা জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন। এ বিষয়ে আদালত এখনো কোনো আদেশ দেননি। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৩ জুন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর (আচার্য) এবং রাষ্ট্রপতি মুর্মু হলেন ভিজিটর (পরিদর্শক)।
সূত্র : প্রথম আলো