পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতা-কর্মীদের মধ্যে দু’দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ভান্ডারিয়া জেপি নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলামের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় ৫টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর এবং ৩টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
গতকাল সোমবার রাতে জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলা তেলিখালী ইউনিয়নের হরিণপালা গ্রামে প্রথম দফা এবং পরে উপজেলা সদরে দ্বিতীয় দফা হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় স্থানীয় উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৯ জন, জেপির ৩ জন ও সাংবাদিকসহ ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। হামলাকারীরা ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বহুতল ভবনের বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর করাসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ৩টি মোটর সাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাকিরুল ইসলাম ও ডা. রেজাউর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, মারাত্মক আহত উজ্জ্বল, অনিক মন্ডল, চপল হাওলাদার, ফারুক খান, মিরাজ, তম্ময় জকি ও শিশির দত্ত নামে ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মির্জা, বর্তমানে জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতা গোলাম কিবরিয়া রিপনের নেতৃত্বে জুনিয়া গ্রামে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভান্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতারা অংশগ্রহণ করেন। ইফতার মাহফিলে বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভান্ডারিয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে সমালোচনা ও উসকানিমূলক কটূক্তি করেন। এ ঘটনায় পরে ইফতার মাহফিল শেষে জেপির নেতারা ভান্ডারিয়ায় ফেরার পথে হরিণপালা এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাদের বাগবিতাণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের কর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় জেপি নেতা-কর্মীদের বহনকারী ৫টি মাইক্রোবাসের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিষয়ে তেলিখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম তালুকদার মাসুম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দাবি করে জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতারা বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে একাট্টা হয়ে যে নিকৃষ্ট ভাষায় বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিলেন তা শুনে শেখ হাসিনার কোনো কর্মী হাত গুটিয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তাই স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও উপস্থিত এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে। এসময় উভয় পক্ষের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভেঙেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় আমাদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী আহত হয়েছেন।
তেলিখালীর ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৯টার দিকে জেপির নেতা-কর্মীরা উপজেলা খাদ্য গুদাম সংলগ্ন আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করে চেয়ার টেবিল, আসবাবপত্র ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে। এসময় তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামের বাসভবন ও ব্যবসায়িক অফিস ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। তারা ওভারব্রিজ সংলগ্ন মোঘল রেস্টুরেন্ট একটি খাবারের দোকানও ভাঙচুর করে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে জেপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তেলিখালীতে এক বিতর্কিত বিএনপি নেতার একটি ইফতার পার্টি শেষে জাতীয় পার্টি- জেপির (মঞ্জু) নেতা-কর্মীরা ভান্ডারিয়ায় ফেরার পথে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বাকবিতান্ডা এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর কিছু সময় পরে ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরে জেপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং লুটপাট করে। পরে একই সন্ত্রাসীরা তার বহুতল ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালায় এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। হামলায় উপজেলা ছাত্রলীলগের ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়।
ভান্ডারিয়া জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তেলিখালী ইউনিয়নে একটি ইফতার অনুষ্ঠানে গেলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তাদের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং হামলায় তাদের ৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
ভান্ডারিয়া থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তেলীখালী এলাকায় একটি ইফতার পার্টি শেষে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও জেপি (মঞ্জু) গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরে এলাকায় পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মঠবাড়িয়া সার্কেল) মোহাম্মদ ইব্রাহিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর প্রশাসক ফাইজুর রশিদ খসরু জোমাদ্দার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্তের পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।