আগামীর চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় - দৈনিকশিক্ষা

আগামীর চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মো. হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

নানা সীমাবদ্ধতা এবং ছোট ক্যাম্পাস নিয়ে দুর্বার গতিতে আপন লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে পুরান ঢাকা তথা বাংলাদেশের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির বয়স আঠারো পেরিয়ে উনিশে পড়লেও ঐতিহাসিক এই প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত বয়স দেড়শ বছরের বেশি। সম্ভবত এটিই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি পাঠশালা থেকে পর্যায়ক্রমে স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। 

১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ রায় চৌধুরী জগন্নাথ (পাঠশালা) স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বালিয়াটি (মানিকগঞ্জ) এর জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরীর মেজ ছেলে (জগন্নাথ রায় চৌধুরীর তিন সন্তান ছিলেন) কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এটিকে কলেজে রূপান্তরিত করে নামকরণ করেন জগন্নাথ কলেজ। তাঁকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলেন অনাথবন্ধু মল্লিক, আইনজীবী ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও বিচারপতি সারদাচরণ মৈত্র। জগন্নাথ কলেজ মাত্র ৪৮ যখন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সুনাম ছড়িয়ে পড়লে সন্তোষের জমিদার রাজা মন্মথ রায় চৌধুরী কলেজ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে তাঁদের টাঙ্গাইলস্থ প্রমথ-মন্মথ কলেজটিকে জগন্নাথ কলেজের সঙ্গে যুক্ত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্নে তার সুতিকাগৃহে যে দুটো কলেজ তাদের পুষ্টি, সহচার্য ও সেবা দিয়ে পালন করেছিল তার একটি হল জগন্নাথ কলেজ এবং অপরটি ঢাকা কলেজ। জগন্নাথ কলেজ তার ছাত্র, শিক্ষক, বই-পুস্তক ইত্যাদি দিয়ে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার হাঁটি হাঁটি পা পা অবস্থা থেকে উত্তরণে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলো। 

উল্লেখ্য, জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা কলেজের ডিগ্রী ক্লাসের সমস্ত ছাত্র নিয়ে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। 

জগন্নাথ কলেজ পূর্ববাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজে ডিগ্রি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েড কলেজে পরিণত হয়। কালের পরিক্রমায় এটি সরকারি জগন্নাথ কলেজ, সরকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষণা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ মহান জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার মাধ্যমে পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলা শুরু করে। পথচলার শুরুর দিকটা এতটা মসৃণ ছিলো না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ এর ২৭ (৪) ধারা মোতাবেক এটি পরিচালিত হওয়ার কথা ছিলো। এই ধারায় উল্লেখ ছিলো, বিশ্ববিদ্যালয়টি তার নিজস্ব আয় থেকে ব্যয় করবে। যার ফলে প্রথমদিকে অনেক ভালো ভালো শিক্ষক চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেননি এবং তৎকালিন কলেজের প্রায় সকল শিক্ষকই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বিভিন্ন সরকারি কলেজে যোগদান করেন। তখন কলেজ আমলের কয়েকজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে ২৭(৪) ধারা বাতিল হলে এটি একটি পরিপূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলা শুরু করে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদে গৃহীত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বলে পূর্বতন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হন। তাদের নিয়ে অল্প কয়েকটি বিভাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু হয়। পরবর্তী সময়ে যুগোপযোগী অনেক বিভাগ খোলা হয়। সঙ্গীত, চারুকলা, নাট্যকলা বিভাগ খোলার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তর করা হয়। পহেলা বৈশাখে পুরান ঢাকার প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। স্বল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক সঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে বিশ্বের সংগীতপ্রেমীদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি অনুষদে ৩৯টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে ১৫ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী, ৬৭৮ জন শিক্ষক ও প্রায় ৭০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি মেধাবিকাশের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, ডিবেটিং সোসাইটি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, রঙ্গভূমি, সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, ফিল্ম ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, মাইম সোসাইটি। সেবামূলক সংগঠন হিসেবে রয়েছে বাঁধন, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ইউনিট ও বিএনসিসি। সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর সবার কাছে  পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেসক্লাবসহ নানান মাধ্যম বিশ্বের একমাত্র অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পনের বছর পর ২০২০ সালে উদ্বোধন করা হয়। এখনো পর্যন্ত একমাত্র ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। খাতা কলমের হিসেবে মাত্র ১১ দশমিক ১১ একর জায়গা নিয়ে পথচলা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ধুপখোলা খেলার মাঠে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় যাতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ আব্দুল হামিদ। বর্তমান ক্যাম্পাসে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমির উপর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন নির্মাণের কাজ চলমান। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। ইতোমধ্যে দৃষ্টিনন্দন লেক খনন, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পুকুর ঘাট নির্মাণ, প্রকৌশলী বিল্ডিং নির্মাণ, জমিতে বালু ভরাটসহ অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বা চলমান রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বর্তমান সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্নক্ষেত্রে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের চাকরির পরীক্ষায় প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিশিক্ষার্থীরা। নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কৃতি শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগের মধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী এবং গবেষক হিসেবে সুযোগ করে নিয়েছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে বরাবরই সরব উপস্থিতি ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্রিকেট দল ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগের খেলায় নিয়মিত কৃতিত্বের সঙ্গে অংশ নিতো। সেই সময়কার এই প্রতিষ্ঠানটি একাধিকবার আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ক্রিকেটার খুদাবক্স, সুকুমার, খালেক, মুক্তা, বাদশা, ইকবালসহ অনেকে ঢাকার ক্রিকেট লীগে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ফুটবলে সব সময় নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। 

কাজী আব্দুল আলীম, আব্দুর রহিম, সাবেক বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদের সচিব আব্দুর রশিদ, ইলিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ, কামরুজ্জামান, গুরুদাস চক্রবর্তী, আবদুল হামিদ, আনোয়ার হোসেন, মারী, গৌর গোপাল সাহা, হবিবুর রহমান, প্রতাপ শংকর হাজরা, জাকারিয়া পিন্টু (স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক), বশীর আহমেদ, গোলাম সারোয়ার টিপু, মোহসিন, কর্নেল মীর নজরুল ইসলাম, জুয়েল (স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ক্রিকেটার) সহ অনেক খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদের বেড়ে উঠা এই জগন্নাথের ক্যাম্পাস থেকে। মহিলা ক্রীড়াবিদ হিসেবে টলি, শামসুন্নাহার, রাজিয়া সুলতানা অণু, রোকেয়া, খুরশিদা বেগম খুশি, মুনিরাসহ অনেকে দেশের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন। ফুটবলে স্যার এফ রহমান শীল্ড, ফিরোজ খান নুন কাপসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয়ে আলোচনায় ছিলো জগন্নাথ কলেজ ফুটবল দল। এছাড়া উন্মুক্ত ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় ভার উত্তোলনে প্রথম বাংলাদেশ গেমসে ইউসুফ ও খলিলের স্বর্ণ পদক লাভ, কুস্তিতে মুন্নি ও নজরুল ইসলামের স্বর্ণ পদক লাভ এবং সাঁতারে মোশাররফ হোসেনের স্বর্ণ পদক অর্জন ছিলো মনে রাখার মতো। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে এশিয়াডে মুষ্টিযুদ্ধে আবদুল হালিমের ব্রোঞ্জ পদক লাভ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জগন্নাথের শিক্ষার্থী বিশ্ববিখ্যাত সাঁতারু ব্রজেন দাস  মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ডবল ক্রসিংসহ তিন বার ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ক্রীড়া ভাষ্যকার আবদুল হামিদ, খোদাবক্স মৃধা ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থী। নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জর্জিস আনোয়ার নাঈস সাফ গেমসে স্বর্ণজয় করেন। বর্তমান জাতীয় ক্রিকেট এবং ফুটবল দলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব করছেন।

প্রখ্যাত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, জাহিদ হাসান, মীর সাব্বির, শামীম জামান, সিদ্দিকুর রহমান, অভিনেত্রী রত্নাসহ অনেকে তাদের অভিনয় দিয়ে সবার মন কেড়েছেন। কন্ঠশিল্পী বিপ্লব, সেলিম খান, শান্তারা নিজেদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কেও সবার সামনে তুলে এনেছেন।

মাত্র আঠার বছর বয়সের একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশাসনিক দক্ষতার প্রমাণ। উপাচার্য হিসেবে প্রথিতযশা পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল খান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জামালপুরে, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ও উপ-উপাচার্য হিসেবে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাঃ আলী নূর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেজ এন্ড টেকনোলজিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করছেন ও করছেন। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শওকত জাহাঙ্গীর এবং ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অণিমা রায়, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. মোঃ আইনুল ইসলাম বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছেন সমুজ্জল। সবচেয়ে বড় আশার জায়গা হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করছেন। এই সকল মেধাবী শিক্ষকদের হাত ধরেই আগামীর চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তত হচ্ছে আগামীর প্রজন্ম। 

জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের ছিলো অগ্রণী ভূমিকা। বৃটিশ বিরোধী প্রথম নাটক মঞ্চস্থ করেছিলো জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ রফিক উদ্দিন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথ কলেজের অনেক শিক্ষার্থী শাহাদৎবরণ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বিজ্ঞান ভবনের সামনে ছিলো একাত্তরের পাক-হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যটি দেশের একমাত্র ভাস্কর্য যেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি এবং গণহত্যা ফুটে উঠেছে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদধুলি পড়েছিলো দেড়শত বছরের পুরানো শিল্প সাহিত্য এবং রাজনীতির আতুরঘর খ্যাত জগন্নাথের ক্যাম্পাসে।

চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো নারী দিবস পালন করা হয়। দুর্নীতি ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেই ক্ষ্যান্ত হননি তার বাস্তব প্রয়োগ শুরু করেছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলের সমন্বয়কদের প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক  দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবির মধ্যে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হয়ে যাওয়া হলগুলো উদ্ধার, ছাত্র সংসদ চালুকরণ, দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করা, মেধার ভিত্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। ছোট ক্যাম্পাস, জায়গার অপ্রতুলতা, নানা সীমাবদ্ধতা, গবেষণাগারের অভাব, ছাত্র হল বিহীন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার জন্য। সহজ করে বললে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জবি 

নির্বাচন নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল - dainik shiksha নির্বাচন নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয়েছে স্নাইপার রাইফেল - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয়েছে স্নাইপার রাইফেল ছয় দাবি মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ছয় দাবি মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বৈষম্য নিরসনে একগুচ্ছ সুপারিশ সরকারিকৃত শিক্ষকদের - dainik shiksha বৈষম্য নিরসনে একগুচ্ছ সুপারিশ সরকারিকৃত শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে সহায়ক - dainik shiksha ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে সহায়ক ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম - dainik shiksha ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037081241607666