নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এখন থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িকের মতো কোনো পরীক্ষা হবে না। তবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে। শিশু শিক্ষার আঁতুড়ঘর আমাদের পরিবার। আশির দশকে প্রত্যেকটা গ্রামে পারিবারিক আবহে পাঠশালা নামক এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিলো। কাঠ-কয়লা গুঁড়ো করে তৈরি করা কালি আর তালপাতায় লেখার মাধ্যমে এর সুভসূচনা লোক মুখে প্রচলিত ছিলো। কোনো সরকারি-বেসরকারি জরিপ বা প্রতিবেদনের কখা আজ আর বলবো না। বাস্তবতার নিরিখে আজ আমাদের শিশুশিক্ষার অবস্থান জানাতে চাই। স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, কার, ফলা দিয়ে সংখ্যা গণনা, শেষে যুক্ত ছিলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ যে বইয়ের অবদান শিশু শিক্ষায় অবর্ণনীয়। সঙ্গে ছিলো ‘আদর্শলিপি’। গোলপাতা বা খড়ের ছাউনি দিয়ে বাইরের চাকচিক্য না থাকলেও শৃঙ্খলা, শাসন বা স্নেহের কোনো কমতি ছিলো না।
শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সাময়িক পরীক্ষা না থাকলে ও পরীক্ষার মতো মূল্যায়নের যথাযথ সুব্যবস্থা ছিলো। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিলো। খুব সকালে স্কুল শুরু হলেও সকালের খাবারের সময় দেয়া হতো। দুপুর ১টার পরে প্রথম পর্বের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই চলে আসতেন। ভরদুপুরে এখান সেখান ঘুরে বেড়ানোর ভয়ে অভিভাবক শিশুকে স্কুলে পাঠিয়ে দিতেন। স্কুল ঘরে তারা কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতেন। বিকেলে স্কুল শেষ হতো ৪টা বা ৫টার মধ্যে। যথাসময়ে সবাই বাড়ি ফিরে খেলায় মত্ত হয়ে যেতেন। সন্ধ্যায় পাশাপাশি বাড়ির সকল শিশুরা এক জায়গায় বসে জোরে জোরে উচ্চারণ করে পড়তেন। শিক্ষক যে বাড়িতে থাকতেন সেখানেও একই নিয়ম মেনে পড়ালেখা চলতো।
সকালে প্রত্যেক শিশু আগের দিনের পড়া না দেখে লিখে স্যারের কাছে জমা দিয়ে তারপর সকালের খাবার খেতে যেতেন। প্রত্যেকটা খাতা তিনি দেখতেন। ক্লাসে শ্রুতি লিখতে দিতেন। বর্ণ পরিচয় বই থেকে ৪টা বা ৫টা করে বানান তিনি পড়া নিতেন। দলে দলে তিনি ইংরেজি, বাংলা, অঙ্ক বুঝিয়ে দিতেন এবং পড়া নিতেন। ক্লসে খুব বেশি না থাকলেও ১৫ থেকে ১৮ জন বিভিন্ন শ্রেণির শিশুরা লেখাপড়া করতেন। আর আজ সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত অবস্থানে নিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। কিছু হলে শিক্ষকের লেজ ধরে টানাটানি ছাড়া কিছুই করতে পরি না! আমরা কি কখনো ভেবেছি সাতক্ষীরার গোলাখালী, গাবুরা পদ্মপুরের শিশুটা কীভাবে লেখাপড়া করতে চান। যার বাবা-মা দুজনে বনে মাছ ধরে সংসার চালান। কখনো কি বলেছি বরগুনার নিশানবাড়ীয়া ছোনবুনিয়ার শিশুর স্বপ্ন কী। যাদের নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জীবন চলে না। ইয়াবার স্বর্গ রাজ্য শাহপরীর দ্বীপের শিশুকে জিজ্ঞাসা করেছি তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? ডিগ্রি পাস হাজার হাজার প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক আছেন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
কেউ কি কখনো ভেবেছেন তারা কীভাবে শিশুদের শিখন-শেখানো পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করবেন। পোষ্য কোটায় যারা প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা কীভাবে শিশুর শিক্ষা পূরণে ভুমিকা রাখবেন। ডায়ালগ আগের মতো শুধু রিহার্সেলটা আলাদা। বছরে এক-দুবার প্রশিক্ষণ সব সমাধান নয়। আমরা জানি শেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক কম। তাই বলে কি শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবেন। কিন্তু না, শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছেন না বরং তারা আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছেন, ঝরে পড়ছেন। শেণিকক্ষে অনিয়মিত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যারা নিয়মিত তারা লিখতে ও পড়তে পারেন আর যারা অনিয়মিত তারা পড়তে ও লিখতে পারেন না।প্রযুক্তির এই যুগে এখনো প্রাথমিকের জন্য কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। মনিটরিং যদি না থাকে তাহলে দুর্বলতা ও ঘাটতি কীভাবে দূর হবে। নতুন নতুন ব্যবস্থাপনা আসবে কীভাবে? কর্তাব্যক্তিরা শুধু নিয়ম করে, বাস্তবায়ন কীভাবে হবে তার নির্দেশনা কোথায়। পরিবর্তনের এই যুগে আমরা পরিবর্তন চাই। পরিবর্তন যদি যুগোপযোগী না হয়, বাস্তবায়নের পন্থা যদি সুনির্দিষ্ট না থাকে তাহলে তা হাস্যরসের পাত্র হয়ে ওঠে। একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার বই পরম ও আরাধ্য বস্তু। সেই বই পড়ার জন্য যদি কান্না আসে তাহলে কি হবে। এক্ষেত্রে একটু না বললে খুব ভুল হয়ে যাবে, পরিবর্তন শুধু শিক্ষাব্যবস্থার হচ্ছে, কিন্তু যারা এই পরিবর্তনের সম্মুখ যোদ্ধা তাদের কথা আমরা সবসময় ভুলে যাই। বেতনের কথা আমি বলবো না, কিন্তু তাদের পাওনা বেতন যখন মাসের পর মাস বন্ধ থাকে তারা চলবেন কীভাবে? আনোয়ারেরা এতো সাহস কোথায় পান, জীবনের শেষ সম্বল পেনশনের টাকা পাওয়ার জন্য যখন বছরের পর তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতে হয়। এক সময় শরীর শেষ হয়ে যায়! এর পরিবর্তন কবে আসবে?
তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িকে কোনো পরীক্ষা হবে না। ধারাবাহিক মুল্যায়ন হবে। চেতনা আর চৈতন্যে আমাদের পরীক্ষা থাকবে। তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনটি বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে প্রথমত ‘প্যারেন্টিং’ দ্বিতীয়ত ‘শিক্ষা ডিজিটালাইজেশন’,সবশেষে ‘জেন্ডার ট্রান্সফরমেটিভ’ শিক্ষার সমন্বয়।
বাবা-মার জন্য সন্তান হচ্ছেন স্রষ্টার বিরাট এক নিয়ামত। সন্তান বাবা-মার চোখের শীতলতা, অন্তরের প্রশান্তি, জীবনের পরিপূর্ণতা এবং সব আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সন্তানের সঠিক লালন-পালনের জন্য তাদের জন্মের পর থেকে প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত বাবা-মাকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়, যার ওপর নির্ভর করে সন্তানের সুষ্ঠু গঠন, সুন্দর বিকাশ, সত্যিকারের শিক্ষা ও সুপ্রতিষ্ঠা।
প্যারেন্টিং ইংরেজি শব্দ। এর প্রতিশব্দ সন্তান প্রতিপালন। পরিভাষায় প্যারেন্টিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সন্তান জন্মের পর থেকে তার অগ্রগতির প্রতি সজাগ থাকা হয় এবং মানসিক, শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ইত্যাদি দিক দিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হয়। এক কথায়, সন্তান প্রতিপালনে বাবা-মার দায়িত্ব কর্তব্যই প্যারেন্টিং। জন্মদাতা পিতামাতা মূলত প্যারেন্টস। এ ছাড়া দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, নানা-নানি, খালা-খালু, মামা-মামি, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক নেতারা কো-প্যারেন্টস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্যারেন্টিং একটি আমানতদারি। এটি সন্তানের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে, সন্তানের অধিকার নিশ্চিত করে, বাবা-মাকে দায়িত্ব সচেতন করে। এটি বাবা-মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই একটি গাইডলাইন। এটি সন্তানের ইহকাল ও পারলৌকিক জীবনে সফলতার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা। এর ওপর নির্ভর করে পিতা-মাতার মান-সম্মান, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সন্তানের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি দেশ ও জাতির কল্যাণ। ভালো প্যারেন্টিংয়ের ফল হলো সুসন্তান, সুখী পরিবার, সুনাগরিক, সুস্থ সমাজ এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্র, সুশৃঙ্খল জাতি। আবার, প্যারেন্টিং ব্যর্থতার ফল হলো চরিত্রহীন সন্তান, নৈতিক অবক্ষয়, আদর্শহীনতা, সামাজিক অবক্ষয়, পাপাচার বৃদ্ধি, হতাশা, অশান্ত পরিবার, বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র এবং বিপর্যস্ত বিশ্ব। তাই ভালো প্যারেন্টিংয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
পরিবারের পরই শিশু সমাজ থেকে শিক্ষা পায়। সমাজের মানুষের আচরণের ভালো-মন্দ দ্বারাও তিনি প্রভাবিত হন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তারও দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হয়। সুতরাং সমাজে একটি শিশুর সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার উপাদানগুলো অবশ্যই বিদ্যমান থাকতে হবে। কোনো সমাজের পিতা-মাতা, অভিভাবক বা দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি নিজে ধুমপান, মদপান, জুয়া, ধর্ষণ, ব্যভিচার, গুম, খুন, চুরি, লুটতরাজ, ডাকাতি, অশ্লীলতা ইত্যাদি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকেন আর তাদের সন্তান বা অধীনস্থরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাহলে প্রকৃত দোষী কে? সন্তান লালন-পালনের প্রধান দায়িত্ব পিতা-মাতা পালন করলেও সমাজ ও রাষ্ট্র তার সুষ্ঠু প্রতিপালনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কথায় আছে, ‘প্রজারা রাজার চরিত্রে চরিত্রবান হয়।’ রাজা অর্থাৎ দায়িত্বশীলরা ভালো তো প্রজা বা নাগরিকরা ভালো।
কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের পরিবার নীতি-নৈতিকতার চর্চা প্রায় শূন্যে। পরিবার ও সমাজব্যবস্থা ভেঙে যাচ্ছে। সর্বত্র অনৈতিকতার ছয়লাব এবং নৈতিকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দায়িত্বশীলতা, আমানতদারিতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শালীনতাবোধ, জবাদিহিতার সোনার চেয়ার আজ দখল করে আছে মিথ্যাচার, গলাবাজি, বিচারহীনতা, দায়িত্বহীনতা, তছরুপ ও জুলুম, অশ্লীলতা, খেয়ানত, অযোগ্যতা আর অদক্ষতা। ন্যায়বোধ আজ নির্বাসনে। মানুষ খুন আজ নুনের চেয়ে সস্তা। এ রকম অরাজক পরিবেশে অনাগত ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে প্যারেন্টিং কতোটা চ্যালেঞ্জিং তা অবশ্যই ভাবনার দাবি রাখে।
বাবা-মাকে শুধু সৎ, চরিত্রবান সন্তান আশা করে বসে থাকলে চলে না, এ জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মত সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হয়। সফল প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে আদর্শিক চারিত্রিক মডেল উপস্থাপন করতে হবে। কারণ, তারাই সন্তানের সবচেয়ে বড় প্রভাবক। মনে রাখতে হবে-তেঁতুল গাছে কখনো আঙুর ফল হয় না। উপার্জনে পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। কারণ, হারাম ও অবৈধ অর্থে লালিত সন্তান কখনো আদর্শ মানুষ হতে পারে না। বৈবাহিক ও দাম্পত্য জীবনে পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। বিয়ে, সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিবাদ ও কলহমুক্ত সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করতে হবে। ইতিবাচক ও উন্নত দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হতে হবে। একান্ত ব্যক্তিগত কর্ম ও বিষয়াদির ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। নিজের পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে। মাঝে মধ্যে আত্মীয়দের বাসায় সন্তানদের বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। পরিবারে লৌকিকতামুক্ত ধর্ম চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক কাজে ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে। এতে শিখন উন্নয়নের শিক্ষাদানের পাশাপাশি বাস্তব শিখন উন্নয়ন হয়ে যাবে। প্যারেন্টিং বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
মানসম্মত বিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করাতে হবে। সন্তানের চলাফেরা, বন্ধুবান্ধব, বাসায় অবস্থান ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সন্ধ্যার পর সন্তান যাতে বাসার বাইরে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানের পড়ার রুটিন তৈরি করতে সহায়তাপূর্বক তা অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানের বন্ধু তৈরির ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। মাঝে মধ্যে তাদের বন্ধুর বাসায় পরিবারসহ আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মিডিয়া ও প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে সামাজিক মাধ্যম থেকে ভালো ভালো, শিক্ষণীয় জিনিস সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। পরে সময়-সুযোগ মতো সেগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সপ্তাহে একদিন মুভি নাইটের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। পরে মুভির শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কোনো জিনিস নিষিদ্ধ না করে ভালো এবং মন্দের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। সন্তানের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ ও ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে হবে। কারো কাছে কোনো কিছু চাইতে বা ঋণ করতে সন্তানকে পাঠানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্তান সম্পর্কে কোনো খারাপ মন্তব্য বা সমালোচনা থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্তানের এইচএসসি পাসের আগে তাকে পারসোনাল ফোন অথবা মোটরসাইকেল দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্তানকে ছোট, নির্বোধ বা অবুঝ ভাবা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো ভুলের কারণে বকা দেয়া বা প্রহার করা, অতিরিক্ত শাসন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মানসিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারের উপার্জন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। অতিরিক্ত নগদ অর্থ তার হাতে দেয়া উচিত নয়। সন্তানের খরচের খাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সন্তানের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে বাবা-মার আসল কাজ বা দায়িত্ব শুরুই হয় তাদের বাসায় ফেরার পর।
কৌশলে হলেও সন্তানের মনের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনি উত্তর না দিলে সে অন্যজনকে আপনার চেয়ে জ্ঞানী ও আপনজন ভাববে। বয়োঃসন্ধিকালীন সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে এবং সে সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রী কিনে দিতে হবে। ভালোবাসা, আদর আর সহযোগিতাও সহমর্মিতার সঙ্গে স্নেহ মিশ্রিত শাসন করতে হবে। মোট কথা, সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ এবং তার সবরকম উন্নতির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করাই প্যারেন্টিং। সুখী-সমৃদ্ধ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বগঠনের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত উজ্জল সফলতা নিশ্চিত করতে প্যারেন্টিং শিক্ষার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সন্তানের প্রভাবক পিতা-মাতা, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে।
লেখক: শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার