আগে লাভ, নাকি আগে সেবার পরিসর বৃদ্ধি? - দৈনিকশিক্ষা

আগে লাভ, নাকি আগে সেবার পরিসর বৃদ্ধি?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আসলাম, দেখলাম, জয় করলাম– এমন পরিস্থিতির গল্প আমরা বহু শুনেছি। তবে সে সব তো কেবল কল্প লোকের গল্পেই সম্ভব। বাস্তবিক কোনো কিছু অর্জনই এত সহজ নয়; একমাত্র লটারিতে কোটি টাকা জেতা ছাড়া।

কথাটা কেন বলছি, সেই গল্পে আসি। গত কয়েকদিনে একটা-দুটো গণমাধ্যমে একটা খবর দেখে আমি একটু বিস্মিতই হয়েছি। খবরটা ব্যবসা-বাণিজ্যের ভেতরকার। আর আমি যেহেতু দুই যুগেরও বেশি সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের খবর ভেতর থেকে দেখছি তাই একটা দায় অনুভব করছি এটা নিয়ে কথা বলার। 

খবরে প্রকাশ গত ৪ বছরে মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ ৬২৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে। খবরটা এমনিতে যতোটা প্রচারিত হয়েছে, ফেসবুকে তার চেয়েও বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এটা নিয়ে। কয়েকটা রিপোর্টে আবার নগদের মুখপাত্রের বক্তব্যও আমার চোখে পড়েছে। এগুলো নিয়েই কয়েকটা কথা পাড়তে চাই।

বাদ দিন নগদের কথা। এমন কোনো কোম্পানি কি আছে যারা লোকসান না দিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন? হয়তো থেকে থাকতে পারে। থাকলেও সেই সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই শতাংশের বিচারে টিকবে না।

নগদের যে প্রতিদ্বন্দী, বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সেই বিকাশের কথাই যদি তুলি তারা তো ওই সেদিনও লোকসান গুনেছে। বিকাশ প্রায় এক যুগ আমাদেরকে সেবা দিচ্ছে। আমি নিজেও নগদ ও বিকাশ দুটি অপারেটরেরই গ্রাহক। কারও প্রতি আমার বিশেষ কোনো বিরাগ বা অনুরাগ নেই। কাছ থেকে দেখেই বলছি, এক যুগের যাত্রা পথে বিকাশ তো মাত্র কয়েকটা বছর লাভ করেছে। শুরুতে বিদেশী অনুদান আর সহায়তা নিয়ে শুরু করা বিকাশও কিন্তু প্রথম চার বছরে লোকসান করেছে। প্রায় একশ কোটি টাকা লোকসান করার তথ্য আছে ব্র্যাক ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে। দশ বছরের মাথায় ২০২১ সালে এসে তো তারা ১২৩ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। তাহলে কি এই লোকসান দেখে আমরা হৈ হৈ করে উঠব যে গেল-রে, গেল-রে।

লোকসান করাটা তো দোষের কিছু নয়, যদি সেই লোকসান হয় ভবিষ্যতের লাভ ঘরে তোলার জন্যে সেবা বিস্তৃত করা বা গ্রাহককে নতুন সেবায় অভ্যস্ত করার প্রেক্ষাপটে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের দেশে ক্যাশলেস সেবা নিশ্চিত করতে মোবাইল আর্থিক সেবার কোনো বিকল্প নেই। ২০২৭ সালের মধ্যে সরকার ৭৫ শতাংশ লেনদেনকে ক্যাশলেস করতে চায়। এই প্রেক্ষিত বিবেচনায় রাখলে তো গ্রাহক প্রান্তে সেবা পৌঁছানো বা গ্রাহককে আরো বেশি করে ডিজিটাল সেবা ব্যবহারে অভ্যস্ত করার জন্যে খরচ তো করতেই হবে। সেটাই ঘটেছে বিকাশ বা হালের নগদের ক্ষেত্রে।

ধরুন না, দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের কথা। ১৯৯৭ সালে এক যোগে তিনটি বিশ্বখ্যাত নতুন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি বাজারে আসে। এদের মধ্যে সবার আগে লাভে আসে গ্রামীণফোন। কিন্তু সেই গ্রামীণফোন তো আর শুরু থেকেই লাভে ছিল না। তাদেরকেও তো সময় দিতে হয়েছে। রবি’র লাভ গুনতে এক দশকের বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর বাংলালিংকের কথা আর না হয় না-ই বললাম। আমার জানা মতে, গত দুই যুগের বেশি সময় তারা কেবল একটি প্রান্তিকে আড়াই কোটি টাকার তো লাভ করেছিল।

তাহলে কী দাঁড়াল? সবচেয়ে যারা বড়, তাদেরকেও বড় হওয়ার জন্যে সময় দিতে হয়। সেবার প্রসার বাড়াতে হয়। সামনে বাড়ার জন্যে আগে খানিকটা পেছনেও যেতে হয়। এই কথাটা বিকাশ-নগদ বা গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকের ক্ষেত্রেও সত্যি। স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর জন্যে এটা আরও সত্য।

 বলাই হয়ে থাকে, ৯৯ শতাংশ স্টার্টআপই ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় না। কিন্তু যে এক শতাংশ সফল হয় আমি মনে করি নগদ-বিকাশ সেই দলের। তীরের মতো এগিয়ে যেতে ধনুকের চেয়ে তাকে পিছিয়েই যেতে হয়। তাহলে যে গতি তৈরি হয় সেটি হয়তো বহু কিছুকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে। স্টার্টআপের সংস্কৃতিটাই এমন। বিশ্বখ্যত যে ওয়ালমার্ট, তাদেরও তো ব্রেক ইভেনে আসতে এক দশক লেগে গিয়েছিল। একই কথা প্রযোজ্য অ্যামাজন বা আজকের জনপ্রিয় উবারের ক্ষেত্রেও। বিলিয়ন ডলার ঢেলেও লাভ থেকে বহু দূরে আছে উবার।

আমাদের এখানে এক সময় ত্রিশটার বেশি মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ছিল। কিন্তু আমি নিজেও বা কয়টার নাম জানি? নগদ-বিকাশের নাম বাংলাদেশে জানে না এমন কেউ কি আর আছে? নাম জানার এই বিষয়টাও তো আর এমনিতে ঘটে না। এখানেও তো প্রচারের বা খরচের বিষয় আছে। আমার মনে হয় কি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার আছে। অনেক সময় পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্যে এগুলো আমলে নেওয়ার দরকার আছে। তাছাড়া বিকাশ যখন শুরু করেছে, তখন বলতে গেলে সে এটা। নগদ শুরু করার সময় বিকাশের মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছে। ফলে আরও ভালো সেবা দিতে গিয়ে তাদেরকে অনেক বেশি খরচ করতে হয়েছে।

চার বছরে ৬২৫ কোটি মানে গড়ে প্রতিবছর ১২৫ কোটি টাকা লোকসান। খুব কি বেশি? নগদের মুখপাত্রের বক্তব্য থেকেই দেখেছি চার বছরে কোম্পানিটি সাড়ে সাত কোটি গ্রাহক পেয়েছে। আমি তো সাড়ে সাত কোটি গ্রাহকের কথা শুনেই বিস্মিত হয়ে গেছি। বলে কি! ৪ বছরে সাড়ে ৭ কোটি মানে দিনে ৫০ হাজারের মতো। শুধু এই একটা তথ্যের ওপরেই আমি মেনে নিচ্ছি যে, নগদের লোকসান করা অযৌক্তিক পর্যায়ে যায়নি। এত গ্রাহককে একত্রিত করতেও তো অনেক খরচ।

মুখপাত্রের বক্তব্য অনুসারে তাদের এখন দৈনিক গড় লেনদেন ১২শ কোটি টাকা। তাই-ই যদি হয় তাহলে তো আমি বলব, সাড়ে সাত কোটি গ্রাহক আর দৈনিক ১২শ কোটি টাকার লেনদেন করানোর মাধ্যমে যে তথ্য সম্পদ নগদ তৈরি করেছে তার মূল্য হাজার কোটি টাকার কম নয়; হয়তো আরও বেশি।

 

লেখক: সাজ্জাদ আলম খান, আর্থিক খাত বিশ্লেষক, সিনিয়র সাংবাদিক।

সূত্র : ডিবিসি নিউজ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032069683074951