আজ ১৭ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দিনটি বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হয়।
শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুন দম্পতির তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিবুর রহমানকে ছোটবেলায় খোকা নামেই চিনত সবাই। টুঙ্গিপাড়ার সেই খোকা পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ দফা ও পরবর্তী সময়ে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন, যা ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগেই ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ শুক্রবার সকাল সাতটায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে তাঁরা মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হবে।
সন্ধ্যা ছয়টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিষ্ট সম্প্রদায়, সন্ধ্যা ছয়টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।
রোববার বিকেল চারটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে দলটি। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।