দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দেশব্যাপী ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ শুক্রবার। তিন দিন ধরে ভোট গ্রহণ চলবে। তবে বিশেষ কিছু এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এরই মধ্যে ভোট দেওয়া শুরু হয়েছে। রাশিয়ার ১১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নিকোলাই খারিটোনভ, নিউ পিপলস পার্টির নেতা ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ এবং লিবারেল ডেমোক্রেসি পার্টির নেতা লিওনিড স্লুুটস্কি এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে কেউই যদি প্রদত্ত ভোটসংখ্যার অর্ধেকের বেশি ভোট না পান, তাহলে প্রথম নির্বাচনের ২১ দিন পর পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সর্বাধিক ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
বিভিন্ন জনমত জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং ঐ তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটে বিজয়ী হবার তেমন সুযোগ নেই। রাশিয়ার জনমত রিসার্চ সেন্টারের জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, পুতিন শতকরা ৮২ ভাগ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হবেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শতকরা ৭১ ভাগ ভোটার ভোট দেবে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকবেন যথাক্রমে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব রাশিয়ার নেতা এবং লিওনিড স্লুটস্কি। তারাও এই নির্বাচনে দেশের জনগণের ৫ শতাংশ ভোট পাবেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
নির্বাচনে সব ভোটারকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত অঞ্চলসহ রাশিয়ার সব ভোটারকে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণে অংশ নিতে বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পুতিন বলেছেন, ‘আমাদের এখন ঐক্য ও সংঘবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক। আপনাদের দেওয়া প্রতিটি ভোটই মূল্যবান। আগামী তিন দিন আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
যে রেকর্ড গড়বেন পুতিন
গত আড়াই দশকে কার্যত বিরোধীহীন হয়ে পড়া রুশ রাজনীতিতে পুতিন কার্যত অপ্রতিরোধ্য বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। তাদের মতে, ক্রেমলিনের লক্ষ্য হলো আগের চারটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় পুতিনের ভোটবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এর আগে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট ভোটে পুতিন সাড়ে ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় পুতিন কথা দিয়েছিলেন যে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের পরে আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন না। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন তিনি। গত ২৩ বছর ধরে রাশিয়ায় কার্যত সবকিছুর কর্তা এখন পুতিন। পশ্চিমাদের চাপ সত্ত্বেও তিনি দেশের শাসনের কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস থেকে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের মে পর্যন্ত উপর্যুপরি দুটি ভোটে জিতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি। তত্কালীন রুশ আইন অনুযায়ী দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকা যেত না। তাই অনুগত দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট করে নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন পুতিন।
এর পরে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় দফায় (তৃতীয় নির্বাচন জিতে) ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হন পুতিন। পুনর্নি্বাচিত হন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। টানা দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্যই ২০২১ খ্রিষ্টাব্দেই আইন পরিবর্তন করেছিলেন সোভিয়েত আমলের গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির সাবেক প্রধান পুতিন। পঞ্চম বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন তিনি। অর্থাত্, তার সামনে এখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই নেতার রেকর্ড ভাঙা সময়ের অপেক্ষা। টানা ২৪ বছর ক্রেমলিনে ক্ষমতায় ছিলেন জোসেফ স্টালিন এবং লিওনিদ ব্রেজনেভ। এবার মস্কোর কুর্সিতে বসতে পারলে নতুন নজির স্থাপন করবেন পুতিন। —পার্স টুডে ও উইওনিউজ