দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হিন্দুধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ শুভ জন্মতিথি। এই তিথিতে কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আজ হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব—শুভ জন্মাষ্টমী।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছিলেন। পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই তাদের মহাবতার এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই অসুন্দরকে দমন করে জাতিকে রক্ষা এবং শুভশক্তিকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে।
হিন্দু পঞ্জিকামতে—সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি বছর মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, কৃষ্ণ ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালসহ বিভিন্ন অত্যাচারিত রাজাকে ধ্বংস করেন এবং ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু ধর্মমতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ্র করেই জন্মাষ্টমী উৎসব।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়। বিভিন্ন মন্দিরের আয়োজকরা জানিয়েছেন, ‘আজ সকালে ষোড়শ উপচারে পূজা শেষ করে প্রসাদ বিতরণ ও ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে কৃষ্ণপূজা এবং কাল আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আজ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয়ভাবে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৮টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, বেলা ৩টায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল এবং রাতে তিথি অনুযায়ী কৃষ্ণ পূজা। জন্মাষ্টমী মিছিল উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিশেষ অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী শ্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাজি সেলিম। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে। ৮ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা। উদ্বোধন করবেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। প্রধান অতিথি থাকবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি থাকবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদুল হক খান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।