চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু আজ রোববার। এবার বন্যার কারণে তিনটি বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ায় প্রথম দিনে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসবেন। এগুলো হলো-ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুর বোর্ড। এসব বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে তাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করছেন।
আর বন্যার কারণে স্থগিত করা সিলেট শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (সিলেট বিভাগ) ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের (সিলেট বিভাগ) পরীক্ষা আগামী ৯ জুলাই শুরু হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানায়, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবার কোনো কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শেনে যাবেন না।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বলছে, পরীক্ষার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় হবে ৩০ মিনিট। আর সৃজনশীল পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ব্যবহারিক বিষয়ের পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় হবে ২৫ মিনিট। আর সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। তবে, আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। এ পরীক্ষার নম্বর কমেছে। পরীক্ষা বিরতিহীনভাবে চলবে। বহুনির্বাচনী বা রচনামূলক অংশের মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না।
বোর্ডগুলো আরো জানিয়েছে, সকাল দশটায় অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাড়ে নয়টায় উত্তরপত্র ও ওএমআর শিট বিতরণ করা হবে। দশটায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেয়া হবে। সাড়ে দশটায় ওএমআর শিট সংগ্রহ করে সৃজনশীল প্রশ্ন বিতরণ করা হবে। আর দুপুর দুইটার পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেড়টায় উত্তরপত্র ও ওএমআর শিট বিতরণ করা হবে। দুইটায় দেয়া হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন। আর আড়াইটায় ওএমআর শিট সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেয়া হবে।
কলেজগুলোর মাধ্যমে প্রবেশপত্র ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্রে তার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি ওএমআর ফরমে লিখে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মার্জিনের মধ্যে লেখা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না। পরীক্ষার্থীদের তত্ত্বীয়, বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক অংশে পৃথকভাবে পাস করতে হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী কেবল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রের উল্লেখিত বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। অন্য বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন। প্রোগ্রামেবল বা প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে মুঠোফোন নিয়ে আসতে পারবেন না।
এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় বসছেন মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮১ ও ছাত্রী ৭ লাখ ৫০৯ জন। মোট কেন্দ্র ৭০৭টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৯০৮টি। গতবছরের তুলনায় চলতি বছরে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৯১ হাজার ৪৪৮ জন। মোট প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৯৪টি, মোট কেন্দ্র বেড়েছে ৬৭টি। গত বছর সব বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ লাখ ৩৩ হাজার ও ছাত্রী ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৬০১ জন।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডর অধীনে এবার আলীম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৮৮ হাজার ৭৬ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৫৯২ জন ও ছাত্রী ৪৪ হাজার ৪৮৪ জন। প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ২ হাজার ৬৮৫টি ও কেন্দ্র সংখ্যা ৪৫২টি।
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ব্যবহারিকসহ বিষয়গুলোতে পরীক্ষার্থীদের প্রতি পত্রে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর মধ্যে রচনামূলকে ৫০ নম্বর ও নৈর্ব্যক্তিকে থাকবে ২৫ নম্বর। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ব্যবহারিক ছাড়া বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতি পত্রে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর মধ্যে ৭০ নম্বর রচনামূলক পরীক্ষা ও ৩০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পদার্থবিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, উচ্চতর গণিত প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের মতো বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিকসহ প্রতি পত্রের পরীক্ষা হবে মোট ৭৫ নম্বরে। এর মধ্যে রচনামূলকে ৫০ ও নৈর্ব্যক্তিকে থাকবে ২৫ নম্বর। রচনামূলক অংশে প্রতিটি পত্রে মোট ৮টি প্রশ্ন থাকবে। এরমধ্যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রতিটিতে ১০ নম্বর। আর নৈর্ব্যক্তিকে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে, এর মধ্যে উত্তর করতে হবে ২৫টিরই। প্রতিটির মান ১ নম্বর।
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ও ব্যবহারিক ছাড়া বিষয়গুলোতে প্রতি পত্রে মোট পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে। এর মধ্যে রচনামূলকে থাকবে ৭০ নম্বর আর নৈর্ব্যক্তিকে থাকছে ৩০ নম্বর। রচনামূলক অংশে ১১টি প্রশ্ন থাকলেও উত্তর করতে হবে ৭টি প্রশ্নের। প্রতিটিতে ১০ নম্বর। আর নৈর্ব্যক্তিকে ৩০টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর করতে হবে ৩০টিরই। প্রতিটির মান ১ নম্বর।
বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। এর মধ্যে রচনামূলকে থাকবে ৭০ নম্বর ও নৈর্ব্যক্তিকে থাকবে ৩০ নম্বর। রচনামূলকে ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৭টি ও নৈর্ব্যক্তিকে ৩০ প্রশ্নের ৩০টিরই উত্তর দিতে হবে। আর বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের রচনামূলক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে। তবে এ তিনটি পত্রের এনসিটিবির প্রণয়ন করা মানবণ্টনে পরীক্ষা হবে।
তবে, আইসিটি বিষয়ে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে মোট ৭৫ নম্বরের। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরের। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ২৫ নম্বরের। লিখিত অংশে রচনামূলকে ৩০ নম্বর ও এমসিকিউতে ২৫ নম্বর থাকবে। রচনামূলকে মোট ৮টি প্রশ্ন থাকবে, ৩টি উত্তর দিতে হবে। আর এমসিকিউ অংশে থাকবে ২৫টি প্রশ্ন, ২০টির উত্তর দিতে হবে। রচনামূলক পরীক্ষা হবে ২ ঘণ্টা ও বহুনির্বাচনী অংশে পরীক্ষা হবে ২৫ মিনিট।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রুটিনে জানা যায়, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা আজ শুরু হয়ে শেষ হবে ১১ আগস্ট। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১২ আগস্ট হতে শুরু হয়ে ২১ আগস্ট শেষ হবে। বিদেশে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা মোট ২৮১টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে জেদ্দায় ৪৭টি, রিয়াদে ৪৩টি, ত্রিপলীতে ২টি, দোহায় ৬৩টি, আবুধাবীতে ৪৪টি, দুবাইয়ে ২২টি, বাহরাইনে ৩৪টি, সাহাম ওমানে ২৬টি।
পরীক্ষার্থীদের প্রতি ডিএমপির ১৯ নির্দেশনা
পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করতে ঢাকা শহরের রাস্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কুইক রেসপন্স টিম কাজ করবে। পরীক্ষার্থীরা যেনো সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য রোডে পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
পরীক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। এসব নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের প্রতি বলা হয়েছে- ১. পরীক্ষার হলে রওনা দেয়ার আগে অবশ্যই প্রশ্নপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং কলম সঙ্গে নিন ২. পরীক্ষা শুরুর আগের দিন কেন্দ্রের অবস্থানটি ভালো করে জেনে নিন এবং আপনার বাসা থেকে কোন রুটে যেতে হবে তার পরিষ্কার ধারণা নিন ৩. পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী/অভিভাবকদের সড়ক-মহাসড়কের যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হোন ৪. বাসা থেকে এমনভাবে বের হতে হবে যেনো ন্যূনতম ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো যায়। ৫. যেসব সড়ক পারাপারে রেলক্রসিং আছে তা বিবেচনা করে বাসা হতে সময় নিয়ে রওনা দেয়া জরুরি।
ডিএমপির নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে- ৬. আপনার বাসার বা পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশের সড়কে যদি কোনো খোঁড়াখুঁড়ি বা মেরামত কাজ চলে তবে তা বিবেচনায় নিয়ে সময়মতো রওনা দিতে হবে ৭. পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাবধানতা অবলম্বন করে যানবাহনে চলাচলের অনুরোধ করা হলো ৮. কোনো অবস্থাতেই গণপরিবহনে ঝুলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা-যাওয়া করবেন না ৯. যেসব পরীক্ষার্থী মোটরসাইকেলে পরীক্ষা কেন্দ্রে গমন করবেন তারা অবশ্যই নিরাপত্তাজনিত কারণে হেলমেট পরিধান করবেন ১০. পরীক্ষা কেন্দ্রে আগত পরীক্ষার্থীরা যানজট বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সম্মুখীন হলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো ১১. ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার থেকে বিরত থাকুন, প্রয়োজনে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন এবং পুলিশের সহায়তা নিন ১২. রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং থাকলে ব্যবহার করুন ১৩. পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে অযাচিত পার্কিং না করে অভিভাবক/পরীক্ষার্থীদের ব্যবহৃত যানবাহন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী নিরাপদ স্থানে পার্কিং করার জন্য অনুরোধ করা হলো ১৪. পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে গেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে অন্য পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়, তাই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কেন্দ্রের সম্মুখে প্রধান গেইটে ও রাস্তায় না দাঁড়িয়ে ফুটপাতে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো ১৫. পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে আড্ডা দেয়া থেকে বিরত থাকুন ১৬. গত এক বছরে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে, যা পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রার্থীদের পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন রাখতে পারে ১৭. ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি জোন কর্তৃক আলাদা আলাদা কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হবে এবং আলাদা ট্রাফিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে ১৮. বর্তমানে বর্ষাকাল চলছে বিধায় অবশ্যই ছাতা, রেইনকোর্ট কিংবা বৃষ্টি থেকে রক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সঙ্গে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো ১৯. যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯-এ ফোন করুন।