প্রশাসনিক সংস্কার ও মাঠপর্যায়ের নানা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে সরকারের ৫৬ মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও সংস্থার কাছে ২৪৫টি প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। এসব প্রস্তাব নিয়েই আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি দক্ষ ও কারিগরি জনবল তৈরির উদ্দেশ্যে দেশের ৮ বিভাগীয় জেলায় কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন বরগুনার ডিসি হাবিবুর রহমান। কক্সবাজার জেলায় একটি বিশেষায়িত মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন কক্সবাজারের ডিসি। এ দুই ডিসির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন আরও কয়েকজন ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। আর ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন কার্য-অধিবেশন হবে। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন শেষ হবে আগামী ২৬ জানুয়ারি।
৮ বিভাগে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষে বরগুনার ডিসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সুযোগ হলে দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এসব দক্ষ জনবলের দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অঞ্চলভেদে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করার সুপারিশ করেছেন বরগুনার ডিসি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন-সড়ক পরিবহন আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে বলা হয়েছে, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ সড়ক পরিবহন নিশ্চিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুতরাং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন-সড়ক পরিবহন আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
চুয়াডাঙ্গার ডিসি আরেকটি প্রস্তাবে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদবি পরিবর্তনের কথা বলেছেন। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার’ পদবির পরিবর্তে ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার’ এবং ‘জেলা শিক্ষা অফিসার’ পদবির পরিবর্তে ‘জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার’ করা যেতে পারে।
হাওর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটির তারিখ পরিবর্তন করে ২৫ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তিনি একাধিক যুক্তি তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটি ৩ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটি ২৮ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত; কিন্তু ২৫ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত সময়ে হাওর অঞ্চলে বর্ষা শুরু হওয়ার ফলে এ সময়ে নৌকা বা হেঁটে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে সমস্যার মুখে পড়ছে। ফলে স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এমন অবস্থায় শুধু হাওর অঞ্চলের জন্য বিদ্যমান ছুটির সময় পরিবর্তন করে ২৫ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত করা হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুবিধা হবে এবং শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমবে।প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের জন্য সৃজিত ডিজিটাল কনটেন্টের মতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ডিজিটাল কনটেন্ট সৃজন করে কোনো সুনির্দিষ্ট চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে প্রস্তাব করেছেন ঝালকাঠির ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তার যুক্তি—এ চ্যানেলের মাধ্যমে ঘরে বসে সহজে শিক্ষা অর্জন করতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা। এ চ্যানেলের মাধ্যমে গরিব শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। প্রাইভেট-টিউশনির ওপর নির্ভরতা কমবে বলেও বিশ্বাস করেন ঝালকাঠির ডিসি। ২৪ ঘণ্টার বিশেষ এই চ্যানেল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হতে পারে বলেও সুপারিশ করেছেন তিনি।
নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন ভোলার ডিসি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মিড-ডে মিল প্রকল্প ফের চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন নরসিংদীর ডিসি। তিনি বলেছেন, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি দেশের দরিদ্র ১০৪ উপজেলায় চালু ছিল। প্রকল্পটি গত বছরের জুনে শেষ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ, বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি, নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি, ঝরে পড়া রোধ, যথাসময়ে শিক্ষাচক্র সমাপ্তকরণ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সম্ভাব্যতা যাছাই চলছে। সম্ভাব্যতা যাচাই রিপোর্ট পাওয়ার পর নতুন করে স্কুল ফিডিং প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। এ প্রস্তাবের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদন হলে পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রম শুরু করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এ বছর সবচেয়ে বেশি ২৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সম্পর্কিত। এ ছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদারকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয় নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে।