বিচারিক আদালতের এজলাসকক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে ১০ আইনজীবী গতকাল মঙ্গলবার একটি রিট করেছেন। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী সপ্তাহে এই রিটের ওপর শুনানি হতে পারে। বিচারিক আদালতের এজলাসকক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরাতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর আইনসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। নোটিশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতের এজলাসকক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরাতে অনুরোধ জানানো হয়। তা না হলে রিট করে আইনি প্রতিকার চাওয়া হবে বলে আইনি নোটিশ উল্লেখ করা হয়েছিলো।
নোটিশের জবাব না পেয়ে ১০ আইনজীবী গতকাল মঙ্গলবার রিট করেন। রিট আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন—জি এম মুজাহিদুর রহমান, মোহাম্মদ নোয়াব আলী, সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মিজানুল হক, মুজাহিদুল ইসলাম, মেসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুল ইসলাম, আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী ও সাজ্জাদ সারোয়ার।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির বলেন, দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা অতীতে ছিলো না। বর্তমানে প্রায় শতাধিক আদালতে এই ধরনের খাঁচা বিদ্যমান, যার সিংহভাগ ঢাকায় অবস্থিত। এ ধরনের খাঁচা ব্যবস্থা সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কারো সঙ্গে নিষ্ঠুর-অমানবিক আচরণ করা যাবে না। অথচ এই খাঁচা ব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও বর্বর আচরণ করা হচ্ছে।
এই আইনজীবী আরো বলেন, সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ, নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদসহ অন্যান্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দলিল এই ধরনের আচরণ অনুমোদন করে না। অন্ধকার যুগে মানুষকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হতো। এই ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ করা হতো। বর্তমানে নিম্ন আদালতে এই খাঁচা ব্যবস্থার মাধ্যমে মূলত নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে। এমনকি জামিনে থাকা আসামিদের হাজিরার জন্যও এই খাঁচা ব্যবহার করা হয়। তাঁদের এই খাঁচায় ঢোকানো হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের সময়ও জামিনে থাকা আসামিদের খাঁচায় ঢুকিয়ে রাখা হয়।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, আদালতকক্ষে লোহার খাঁচা স্থাপনের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, ইতিমধ্যে স্থাপিত লোহার খাঁচা অপসারণ করে কাঠের ডক কেন প্রতিস্থাপন করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। যেসব আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা স্থাপন করা হয়েছে, তার একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিলের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে রিটের প্রার্থনায়। রুল হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিনে থাকা আসামিদের আদালতকক্ষে লোহার খাঁচায় না ঢোকানোর জন্য রিটের প্রার্থনায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে।