দৈনিক শিক্ষাডটকম, বরিশাল : বরিশার বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের নানা অনিয়মের কারণে বরিশাল বিভাগের ৬০০ বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৫০০ শিক্ষক বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আনোয়ার হোসেন শিক্ষকদের ফাইলগুলো দিনের পর দিন আটকে রাখেন। এমনকি তুচ্ছ কারণে ফাইলগুলো বাতিল করে দেন। এর ফলে এ বিভাগের হাইস্কুলের শিক্ষকেরা চাকরি করলেও এমপিওভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে এমপিও বঞ্চিত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী বিভাগীয় প্রতিরোধ কমিটি। শনিবার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এমপিও বঞ্চিত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী বিভাগীয় প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক আবদুল জববার খান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন শিক্ষকদের এই ফাইলগুলো দিনের পর দিন আটকে রাখেন, এমনকি তুচ্ছ কারণে ফাইলগুলো বাতিল করে দেয়া হয়। এর ফলে হাইস্কুলের এই শিক্ষকরা চাকরি করলেও এমপিও থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ সময় বঞ্চিত শিক্ষক মো. লিয়াকত আলী জমাদ্দার বলেন, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুন থেকে ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার মরিচবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি একই উপজেলার আমরাবুনিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু গত ৯ মাস ধরে তিনি কোনো সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, আমি ৪টি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছি, যতোবার নিয়োগ হয়েছে, ততোবার নতুন করে এমপিও হয়েছে, কিন্তু এবার শেষবারে গত ৯ মাস কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। ইতোমধ্যে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে, আমি গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অর্থ কষ্টে থাকলেও এক টাকা বেতন-ভাতা পাইনি।
মো. হুমায়ুন কবির, নলছিটির হাজী এম এ রশিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নলছিটি পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই আসলেও প্রায় দুই বছর ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, আগে বেতন-ভাতা পেলেও নতুন প্রতিষ্ঠানে তিনি কোন বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানালেও কোন কাজ হচ্ছে না।
একইভাবে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি, কাঠালিয়া, বরিশাল জেলার সদর, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদসহ বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার ৬০০ স্কুলের ১৫০০ শিক্ষক বেতন ভাতা থেকে গত ৬ মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত বঞ্চিত হয়ে আছে বলে শিক্ষকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
জুনিয়র পদ থেকে সিনিয়র পদ, বা এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে গেলে বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে আটকে যাচ্ছে ফাইল। এর ফলে বেতন-ভাতাও পাওয়া যাচ্ছে না, অভিযোগ করেন তারা।
ভুক্তভোগীরা বলেন, তার (আনোয়ার) হয়রানি ও অনিয়মের কারণে আমরা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত-আমরা আমাদের সংসার চালাতে পর্যন্ত পারছি না।
বরিশাল শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা স্কেল পরিবর্তন বিষয়ে ৩৮ ধরনের কাগজপত্র লাগে। এর ফলে এই প্রক্রিয়াটি জটিলতর রূপ নিয়েছে। তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে আবেদনগুলো বাতিল করায় শিক্ষকরা অসহায় হয়ে পড়েন, তাদের বেতন-ভাতা আটকে থাকে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই বিষয়টির সুরাহা হলেও বরিশাল বিভাগে এটি আটকে দেন উপ-পরিচালক।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষক জামাল হোসেন জানান, উপ-পরিচালক এই ফাইলগুলো ওকে না করায় বাধ্য হয়ে ডিজি অফিসে ছোটাছুটি করে আমরা ২২ জনের ফাইল ওকে করতে পেরেছি, কিন্তু এখনো প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক এই সমস্যায় পড়েছে।
ভান্ডারিয়া উপজেলার দারুল হুদা আদরশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হাইস্কুলের শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, আমি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ অক্টোবর এখানে বদলি হয়ে এলেও অদ্যাবধি বেতন -ভাতা পাইনি।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা জানান, আমরা বেতন-ভাতা না পলে অনশন ও শিক্ষা অফিসের কার্যালয় ঘেরাও করবো-ঈদের পর আমরা এই কঠো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
মোফাজ্জেল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সামিনা আফরোজ জানান, তার স্কুলের ৭ শিক্ষক- কর্মচারী গত ২ বছর ধরে এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্জিত হচ্ছেন। উপ-পরিচালকের কাছে এমপিও ভুক্তির ফাইল আটকে থাকায় আমরা গত ২ বছর ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছি না।
উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বরিশাল অঞ্চল পরিচালক, প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, হয়রানির বিষয়টা আমি শুনেছি। উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে হাইস্কুলের এতো ফাইল আটকে আছে এটা আমিও জানি না।
একজন শিক্ষক পূর্বে বেতন-ভাতা পেতেন, এখন কেনো তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকবে? এটা কাম্য হতে পারে না। আমি এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবো, যোগ করেন তিনি।