চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত সেসিপ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচ্ছৃঙ্খলতায় শিক্ষাভবনে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার বিকেলে তারা সেসিপ প্রকল্পের নারী কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ, গালমন্দ ও অপর কয়েকজনকে কিলঘুষি মেরেছে। তাদের দাবি রাজস্বখাতে নেয়ার বিরোধীতা করেছেন প্রকল্পের যুগ্ম-পরিচালক শামসুন্নাহারসহ কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন কয়েকঘন্টা। সেসিপ প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে বদলি হয়ে যাওয়া শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদেরও মারধর করেন তারা। অপরাপর প্রকল্পে কর্মরত কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা তাদের সহকর্মীদের সহায়তায় এগিয়ে গেলেও তারাও বিপদে পড়েন। রাত আটটার দিকে সেনাবাহিনী এসে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা করে অবরুদ্ধ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের উদ্ধার করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষা ভবনের ভেতরে তান্ডব চালানো আন্দোলনরত সেসিপ কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রনে আনতে বিকেলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গত রোববার থেকে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষা ভবন প্রায় অচল করে রেখেছেন। গত সোমবার তারা শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন-ভাতা প্রক্রিয়াকরণের ও বিতরণের কারিগরি শাখা ইএমআইএস সার্ভার বন্ধ করে দিয়েছেন। গত সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে তারা শিক্ষা ভবনের নতুন ভবনে অবস্থিত ইএমআইএস সেলে ঢুকে সার্ভার বন্ধ করে দেয়। ওই সেলে কর্মরত সবাই সেসিপ প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মকর্তা। বন্ধ হওয়ার ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন হাইস্কুল ও কলেজের প্রায় তিন লাখ শিক্ষকের বেতন-ভাতা বিতরণ বন্ধ ।
আরো পড়ন: মর্যাদা রক্ষা কমিটির শিক্ষা ভবনে অবস্থান শুরু
অধিদপ্তরের কর্তারা একদিনের জন্য সার্ভার চালু করার জন্য আন্দোলনরতদের অনুনয় বিনয় করলেও সার্ভার চালু করেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক কলেজ ও প্রশাসন অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করিমের কক্ষে গিয়েও হইচই ও বেয়াদবি করেছেন মর্মে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আন্দোলনকারীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, কর্মরত জনবলসহ সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) ১ হাজার ১৮৭টি পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে চরম বৈষম্যের শিকার তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন সেসিপ প্রোগ্রামে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী কর্মরত। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসগুলোতে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে এখনো ইনক্রিমেন্টবিহীন স্কেলভিত্তিক বেতনে কর্মরত আছেন তারা। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষিত, ১০-২২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ১ হাজার ১৮৭ জনবলকে মানবেতর জীবন-যাপন থেকে মুক্তি দিতে পদগুলো জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রমতে, এই জনবলকে রাজস্বখাতে নেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। পদগুলো রাজস্বখাতে যাবে কিন্তু জনবল না। প্রয়োজনে আবারো থোক বরাদ্দ দিয়ে এই জনবলকে আরো এক বছর চাকরিতে রাখা হতে পারে। যেমনটা গত কয়েকবছর ধরে হয়ে আসছে।
এদিকে এই খবর পেয়ে মারমুখী হয়ে শিক্ষাভবনে ভাঙচুর, নারী কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। রাত সাড়ে আটটা অবধি তারা সেসিপ প্রকল্প অফিসে তাণ্ডব চালান।
এমপিওর সার্ভার বন্ধ রেখে এমপিও শিক্ষকদের ভোগান্তি হওয়ার সমালোচনা করছেন এমপিওপ্রত্যাশীরা।