আন্দোলন চলবে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিবৃতি - দৈনিকশিক্ষা

আন্দোলন চলবে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

৬ সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছেন, পুলিশের বন্দুকের মুখে অন্য সমন্বয়কদের জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা আদায় করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে এক বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, 'সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব।' ইতোমধ্যেই এই বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম। নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত-নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।'

এসময় তারা আরও বলেন, 'আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা ইতোমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই।' পরে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে নাহিদ ইসলাম সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। 

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, 'বিগত কয়েকদিন যাবৎ গণহত্যা, গণগ্রেফতারের পর সরকার এখন এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে, ছাত্রসমাজের দাবিসমূহের প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, সারাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের উপর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সাথে তামাশা করেছে।'

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর সরকার সারাদেশে রেইড করে গণগ্রেফতার করেছে। হাজার হাজার মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। জানালার পাশে পড়ার সময় কোমলমতি শিশু সামিরকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত ও শহীদ করা হয়েছে।  এই অবস্থায় আমরা কঠোর ভাষায় বলতে চাই, আমাদের দাবী আদায় না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্রসমাজের আন্দোলন চলবে।'

এই বিবৃতির মাধ্যমে সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও একই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আব্দুল কাদের বলেন, 'আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে ভাই, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ছাত্রসমাজ শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী করতে পারে না। আমাদের দাবী আদায়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অনুরোধ করছি।'

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেয়। এক পর্যায়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। তাদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের অবরোধও দেয়। এক পর্যায়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীসহ সারা দেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে হল খালি করার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে সরকার। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়। ব্যাপক ভাঙচুর হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। বেসামরিক প্রশানসকে সহায়তায় মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036101341247559