ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি সিজিপিএ ৩.৩০ পেয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করেছেন। রোববার এই ফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে আবু সাঈদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের খবরে তার রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে আনন্দের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চলছে মাতম। ছেলের ফলাফলের খবরে মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাবা হামার পাস করছে। বাবার রেজাল্ট ভালো হয়েছে। হামার বাবা বাঁচি থাকলে কত খুশি হলো হয়। হামি তো রেজালের কিছুই বুঝি না। সবার সাথে আজ হামার বাবা কত আনন্দ করল হয়। আগে রেজাল হলে ছ্যোল মোক ফোন দিয়ে কছিল মা হামার রেজাল হছে। আজকের রেজাল হলেও বাবা বাদ দিয়ে অন্য মানুষ হামাক কছে কয় যে তোমার ছ্যোলের রেজাল হছে।’ আবু সাঈদের পরীক্ষার ফলাফল জানার পর রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে বসে বিলাপ করে কথাগুলো বলেন তার মা মনোয়ারা বেগম।
আবু সাঈদের ফলাফলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ‘মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তার স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল আজ (গতকাল) প্রকাশ করা হলো। ৬৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আবু সাঈদ মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করেছে। এটি আমাদের ভালো লাগার বিষয়। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে আমরা শোকাহত। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’
গত ১৬ জুলাই বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বেরোবি ক্যাম্পাসের ১ নম্বর ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) এই শিক্ষার্থী ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক।
আবু সাঈদ কোটা আন্দোলনে অংশ নেন জুলাইয়ের শুরুতে। তার স্নাতকের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা তার আগেই শেষ হয়। সহপাঠীরা বলেন, শেষ সেমিস্টারে আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন আবু সাঈদ। ফলে সর্বশেষ সেমিস্টারে তার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৩৮, যা গত সেমিস্টারের চেয়ে বেশি। আবু সাঈদের সম্মিলিত সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৩০। তার ব্যাচে স্নাতকে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ৩.৫২।
সহপাঠী পংকজ রায় বলেন, ‘আবু সাঈদ আমাদের বিভাগের একটি হিডেন পার্ল ছিল। আজ আবু সাঈদ থাকলে কতই না ভালো হতো। মাস্টার্সের ক্লাস, অনার্সের রেজাল্ট সবকিছুর আনন্দ আবু সাঈদকে ছাড়া ম্লান হয়ে পড়েছে।’
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘এ রেজাল দিয়ে হামরা কি করম বাবা? হামার তো আর ছ্যোল নাই। ছ্যোল থাকলে এ রেজালের দাম আছিল। এ খবরগুলা শুনে অনেক কষ্ট হয়। ছ্যোল তো ভালো ছাত্র আছিল।’
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানান আবু সাঈদের ভাই হোসেন আলী। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শুধু এবার নয়, প্রতিবারই আমার ভাই ভালো রেজাল্ট করে। এ বছর তো আমার ভাই নেই, আমি এই রেজাল্ট দিয়ে কী করব?’
আবু সাঈদের বড় ভাই রিকশাচালক বকুল বলেন, ‘ভাইয়ের রেজাল শুননো মানুষের কাছে। আগে ভাইয়ের রেজাল হলে সবার সাথে কথা কছিল। এখন এ রেজাল দিয়ে কী হবি? সবার কাছে ভাই হামার আদরের আছিল। সবাই ভাইয়ের রেজালে খুশি হতো।’