অফিসিয়াল কাজের জন্য দরকারি আরবি ভাষা লিখতে, বলতে ও পড়তে জানেন না মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। শুধু তারাই নন সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার আলিয়া মাদরাসার নিয়োগ, বেতন-ভাতা ও পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই দুটি প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির কর্মকর্তারাও আরবি ভাষা পড়তে, বলতে ও লিখতে জানেন না। শুনেও সব বুঝতে পারেন না। বড় কর্তারা আরবি পড়তে ও লিখতে না জানায় ভরসা করতে হয় গুটিকয় অধস্তন কর্মককর্তা ও অফিস সহকারীর ওপর। আর তাই এ দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরবি জানা লোকদের বেশ কদর। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, আরবি জানা লোকের অভাবে মাদরাসা বোর্ডের সনদ শাখায় যুগ যুগ ধরে ঘুরে ফিরে একই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পদায়ন পান। আর আরবি না জানায় বিভিন্ন ধরনের সনদ ও মার্কশিট যাচাইয়ে ওই গুটিকয় কর্মকর্তার ওপরই নির্ভর করতে হয় মাদরাসা বোর্ডকে। আর এ সুযোগেই টানা বারো বছর জামায়াতপন্থি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন মাদরাসা বোর্ডের গোপনীয় শাখায় কর্মরত থাকতে সক্ষম হন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আরবি ভাষা না জানায় আরবিতে লেখা বিদেশি চিঠির মর্ম বোঝেন না তারা। সাবলীলভাবে কথাও বলতে পারেন না। এতে নানা ধরণের সমস্যা সমাধান না করে সেগুলো অব্যাহতভাবে চেপে যায় কর্মকর্তারা। ক্ষতিগ্রস্থ হয় দেশ। বঞ্চিত হয় লাখ লাখ মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী তথা গোটা দেশ। এই দুই শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কর্তারা তাই সরকারি টাকায় শিক্ষাসফরের পছন্দের তালিকায়ও আরবি ভাষাভাষির দেশগুলো রাখেন না। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, থাইল্যাণ্ড, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে তাদের সরকারি সফরের অভিজ্ঞতা বেশি। গত সপ্তাহে মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান কানাডা সফরে গিয়েছিলেন ইএমআইএস সেল বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য।
এরই মধ্যে আজ (১৮ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে উদযাপিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি উদযাপনের আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মো. সোহরাব হোসাইন,কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব মাদরাসার অধ্যক্ষ ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।
আরও পড়ুন:
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
নিয়োগ ও পিএইচডি জালিয়াত আবু হানিফাই আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেজিস্ট্রার!
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদরাসা শিক্ষার নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য গেলে শিক্ষা বিষয়ক প্রগতিশীল সাংবাদিকদেরকেও এড়িয়ে চলেন এই দুই সংস্থার কর্তারা। তবে, সংবাদপত্রের কার্ড ও টেলিভিশনের বুম হাতে থাকা শিবিরকর্মীদের সঙ্গে দারুন সখ্য এই দুই সংস্থার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদরাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সফিউদ্দিন একজন পোস্টাল ক্যাডার কর্মকর্তা।২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি-জামাত আমলে ১০ শতাংশ কোটায় বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতি পান। ফেনীতে জন্ম নেয়া সফিউদ্দিনের স্কুল-কলেজ ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়েছেন।
১৪শ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মাদরাসা বোর্ডর চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ। দর্শনের এই অধ্যাপক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছাত্রলীগ থেকে দূরে থাকলেও চলতি বছর বেসরকারি কলেজ শিক্ষক রতনের জাদুতে আওয়ামী লীগপন্থী বনে যান বলে শিক্ষা প্রশাসনে কায়সারকে নিয়ে বলাবলি হচ্ছে। এই পদে আসার আগে অধ্যাপক কায়সার চাঁদপুরের একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে ছিলেন। তার আগে তিনি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ কয়েকটি বড় পড়ে ছিলেন। নানা অভিযোগ ছিলো। দাপ্তরিক কাজের জন্য আরবি পড়তে, বলতে ও লিখতে না জানলেও সরকারি খরচে ১০ দিনের কানাডা সফরশেষে ১৪ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন।