জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট আসন বরাদ্দ না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ও বেগম খালেদা জিয়া হলের ছাত্রীরা এ বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ সময় উপাচার্য তাঁর নিজ বাসভবন থেকে বের না হলেও অন্য দায়িত্বশীল শিক্ষকেরা উপস্থিত হন।
ছাত্রীদের ভিসি ভবনের সামনে ‘আমরা থাকি গণরুমে, ভিসি স্যার কী করে’, ‘গণরুমের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিশ্রুতিতে ছাত্রীরা হলে ফিরে যান।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, শেখ হাসিনা হল ও বেগম খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের গণরুম থেকে সরিয়ে নতুন হলগুলোতে আসন নিশ্চিত করতে হবে। পরে এই আন্দোলনে সমর্থন জানাতে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রীতিলতা ও সুফিয়া কামাল হলের নারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দেড় বছর ধরে তাঁরা আবাসিক হলের গণরুমে অবস্থান করছেন। তাঁদের গণরুমে না রাখার প্রতিশ্রুতিতে প্রথম দিকে দুই মাসের বেশি অনলাইনেও ক্লাস নেওয়া হয়। তবুও তাঁদের আসন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ সময় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মুহসিনা রহমান মীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৩ তারিখ নতুন হলে সিটের ব্যাপারে আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। তখন উপাচার্য স্যার নিজে আমাদের কথা বলেছিলেন এ মাসের ২৮ তারিখ একটা সুরাহা করবেন। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত আসন পাইনি।’
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৫০ ব্যাচের ছাত্রী মারিয়া রহমান বলেন, ‘আগেরবার যখন স্যারের কাছে এসেছিলাম তখন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু এখনো তিনি সিদ্ধান্ত জানাননি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবাসিক হলে সিট চাই।’
একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মনজুরুল হক, প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা, বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শারমিন সুলতানা, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবির প্রমুখ উপাচার্যের ভবনের সামনে উপস্থিত হন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে হলের লোকবল সংকট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এখন তো রাতারাতি শিক্ষার্থীদের নতুন হলে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রসেসের মধ্য দিয়ে হলের জন্য লোকবল নিয়োগ করা হবে।’
তিনি জানান, আগস্টের ১ তারিখ এ বিষয় নিয়ে হল প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে কথা বলা হবে। সেখানে নতুন লোকবলের বেতনকাঠামো নির্ধারণ ও ধীরে ধীরে নতুন হলগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক মনজুরুল হক বলেন, ‘নতুন আরও দুটি হলের চাবি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে হল চালু করতে পারছি না। আগামী ১ আগস্ট আমাদের প্রভোস্ট কমিটির মিটিং আছে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে নতুন হল খোলার ব্যাপারে।’
এর আগে, ২৩ জুলাই আবাসিক হলে সিটের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্রীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও অন্য শিক্ষকেরা ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রীদের ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে আবাসিক হলে আসন নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত বছর উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম দায়িত্ব গ্রহণের পর একাধিক অনুষ্ঠানে গণরুম বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দেন। এরপরে নতুন দুটি আবাসিক হল চালু হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম অব্যাহত থাকে।