অবশেষে লজ্জার রেকর্ড থেকে মুক্তি পেলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়েছিলো টাইগারদের। এমনকি আফগানিস্তানের কাছেও হারতে হয়েছিলো বাংলাদেশকে।
অবশেষে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে সেই লজ্জার ইতিহাস বদলালো সাকিব আল হাসানের দল। মিরপুর টেস্টে আইরিশদের ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩৮ রানের। ব্যাট করতে নেমে লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ ভেবেছিলো ক্রিকেটের নবাগত দেশটিকে পেয়ে জয় তুলে নেবে। কিন্তু উল্টো মুমিনুল হকের দলকে লজ্জা দিয়ে ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছিলো আফগানরা।
এবার আয়ারল্যান্ডকে পেয়ে বেশ সতর্ক ছিলো বাংলাদেশ। যে কারণে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং ওপেনার লিটন দাসকে আইপিএলের ছাড়পত্র পর্যন্ত দেয়নি বিসিবি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটাকে তারা এতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলো।
মিরপুরে প্রথম দিন থেকেই প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশের। সফরকারীদের ২১৪ রানে অলআউট করে দিয়ে বাংলাদেশ করেছিলো ৩৬৯ রান। ১৫৫ রানের লিড। জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে ১৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে আইরিশরা।
বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা ভেবেছিলো ইনিংস ব্যবধানেই হয়তো জয় পেতে যাচ্ছে তাদের দল। বৃহস্পতিবার সে আশাতেই খেলা দেখতে বসেছিলো তারা।
কিন্তু সবার ধারনা পাল্টে দিয়ে উল্টো বাংলাদেশকেই পেছনের পায়ে ঠেলে দেয় আইরিশরা। বিশেষ করে প্রথমে টেক্টর-টাকার জুটি, এরপর টাকার-ম্যাকব্রাইন জুটি। এই দুই জুটিতে বাংলাদেশের লিড অতিক্রম করে যাওয়াই নয়, দারুণ চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিতে থাকে অ্যান্ড বালবির্নির দল।
অসাধারণ এক সেঞ্চুরি উপহার দেন লরকান টাকার। ১০৮ রানের ইনিংস খেলে আয়ারল্যান্ডকে বিপদমুক্ত করেই তিনি আউট হন। তার আগেই হ্যারি টেক্টর অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি উপহার দেন। প্রথম ইনিংসে ৫০ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি করেন ৫৬ রান।
লরকান টাকার আউট হয়ে গেলেও আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ১৫৬ বলে ৭২ রান করে বাংলাদেশকে বেশ ভালোই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে ৮ উইকেটে ১৩১ রানের লিড নিয়ে মাঠ ছাড়ে আয়ারল্যান্ড। আজ সকালে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য আর মাত্র ৬ রান যোগ করতে সক্ষম হয় আয়ারল্যান্ড। বাকি থাকা দুটি উইকেটই তুলে নেন পেসার এবাদত হোসেন। আয়ারল্যান্ডের লিড দাঁড়ায় ১৩৭ রান।
১৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝোড়ো সূচনা করেন লিটন দাস এবং তামিম ইকবাল। ৫ ওভারে ৩২ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা দুজন। ১৯ বলে ২৩ রান করে আউট হয়ে যান লিটন দাস। মার্ক অ্যাডেয়ারের বলে বোল্ড হন তিনি। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত এসে তামিমের সঙ্গে ১১ রানের জুটি বাধেন।
এবার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে অ্যান্ডি বালবির্নির হাতে ক্যাচ দেন শান্ত। করেন মাত্র ৪ রান। তামিম এবং মুশফিক জুটিই বাংলাদেশের জয় ত্বরান্বিত করে। ৬২ রানের জুটি গড়েন এ দু’জন। দলীয় ১০৫ রানের মাথায় আউট হন তামিম ইকবাল। তিনি করেন ৬৫ বলে ৩১ রান। বাকি পথ মুমিনুল হককে নিয়ে পাড়ি দেন মুশফিকুর রহিম।
৪৮ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। ৭টি বাউন্ডারির মার মারেন তিনি। ২২ বলে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল হক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২১৪/১০, ৭৭.২ ওভার (হ্যারি টেক্টর ৫০, লরকান টাকার ৩৭, কার্টিস ক্যাম্ফার ৩৪, মার্ক অ্যাডেয়ার ৩২; তাইজুল ইসলাম ৫/৫৮, এবাদত হোসেন ২/৫৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ২/৪৩, শরিফুল ইসলাম ১/২২)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৬৯/১০, ৮০.৩ ওভার (মুশফিকুর রহিম ১২৬, সাকিব আল হাসান ৮৭, মেহেদী হাসান মিরাজ ৫৫, লিটন দাস ৪৩, তামিম ইকবাল ২১, মুমিনুল হক ১৭; অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ৬/১১৮, বেন হোয়াইট ২/৭১, মার্ক অ্যাডেয়ার ২/৬৪)।
আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ২৯২/১০, ১১৬ ওভার (লরকান টাকার ১০৮, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ৭২, হ্যারি টেক্টর ৫৬, গ্রাহাম হিউম ১৪; তাইজুল ইসলাম ৪/৯০, এবাদত ৩/৩৭, সাকিব আল হাসান ২/২৬, শরিফুল ১/৩৫)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৩৮/৩, ২৭.১ ওভার (মুশফিকু রহিম ৫১*, তামিম ইকবাল ৩১, লিটন দাস ২৩, মুমিনুল হক ২০*; মার্ক অ্যাডেয়ার ১/৩০, বেন হোয়াইট ১/৪৩, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ১/৫২)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম (১২৬ + ৫১* রান)।