ইংরেজিতে ফেলের নেপথ্যে - দৈনিকশিক্ষা

ইংরেজিতে ফেলের নেপথ্যে

ননী গোপাল সূত্রধর, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

কথা সত্য। প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে ফেল করে ফলাফলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্যতাকেই বহুলাংশে  দায়ী করা হয়। কিন্তু কেনো ইংরেজিতে ফেল করে তার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি বলে মনে করি। ইংরেজি কি ভাষা না বিষয়? এই নিয়ে আমাদের একটা মৃদু স্নায়ু টানাপোড়ন আছে বৈকি। কেউ যদি ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে শিখে তার লিসেনিং, স্পিকিং, রিডিং ও রাইটিং স্কিল উন্নতি করে তাহলে সে পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে কখনই অকৃতকার্য হবে না। নিশ্চিতভাবেই সে উক্ত বিষয়টি পাস করবে।  কিন্তু কেউ যদি এটিকে বিষয় হিসেবে শিখে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় সেখানে প্রশ্নপত্র কমন না পড়লে তার নিশ্চিতভাবেই অকৃতকার্য হবার অনেক সুযোগ থাকে। তাই বিষয় টি সহজেই অনুমেয় যে, ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে রপ্ত করতে না পারায় আজ এতো এতো ফেল! 

আরো একটি বড় কারণ হলো ইংলিশ ফোবিয়া (English Phobia)। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ও কঠিন ভাষা। এই ভীতিকর ভাষাটাই যে এতো দরকারি তা বুঝেও এর থেকে কৌশলে দূরে থাকার ও অনেক ক্ষেত্রে বিদ্বেষ পোষণ করার প্রবণতা আমাদের ঐতিহ্যগত। এই ভাষাকে আপন করে গ্রহণ না করার কারণে ও চর্চার অভাবে ইংরেজির অজ্ঞতা সৃষ্টি হচ্ছে যা কিনা পরীক্ষার সামগ্রিক ফলাফলের চিত্রটাকে মলিন করে দিচ্ছে।

আমাদের, বিশেষকরে বেশিরভাগ মফস্বল শিক্ষার্থীদের ইংরেজি রাইটিং স্কিলে অদক্ষতা। পরীক্ষার রাইটিং পার্ট এ প্যারাগ্রাফ, এপ্লিকেশন, স্টোরি রাইটিং, কম্পোজিশন,  লেটার, ইমেইল ইত্যাদি মুখস্থ করে শিখে কিন্তু যদি পরীক্ষায় মুখস্থ করে রাখা টপিকগুলো কমন না পরে কিংবা ভুলে যায় তখনই ব্যত্যয় ঘটে যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আর একজন পরীক্ষার্থী কতটুকুই বা মুখস্থ করে রাখতে পারে। এছাড়া প্যারাগ্রাফ এপ্লিকেশন যথাযথ ফরম্যাটে না লিখলে তো কারবার শেষ!

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে  কাজ করার সুবাদে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট যে, পরীক্ষার্থীদের মগজে কিছু মিথ আছে যেগুলো তাদেরকে অকৃতকার্যতার দিকে ধাবিত করছে। তারা প্রায়শই বলে, ‘দুই পৃষ্ঠা লিখছি প্যারাগ্রাফ, স্যারে (পরীক্ষক) কম করে হলেও ১০ নম্বরের মধ্যে ৪-৫ নম্বর ত দিবেই।’ এই যে অযাচিত ভাবনা সে আর বাস্তবে পরিণত হয় না। দেখা যায় উত্তরপত্র মূল্যায়নে যে বিষয়গুলো ধরা পড়ে সেগুলো হলো: বানান ভুল, ব্যাকরণগত ত্রুটি, অপ্রাসঙ্গিক শব্দচয়ন, অপ্রাসঙ্গিক বাক্য,  প্রশ্নপত্র থেকে অবিকল বাক্যচয়ন, বাংলা কথায় ইংরেজি অক্ষরে লিখন ইত্যাদি। একারণে পরীক্ষার্থীরা আশানুরূপ নম্বর পায় না। আরেকটি বিষয় হলো এইচএসসিতে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলিয়ে কম করে হলে ১০০ মার্ক আছে পিউর রাইটিং, যেখানে এই রাইটিং এ মার্ক তোলা কঠিনতম কাজ। ভুলভ্রান্তির কারণেই অনেকে নম্বর পায় না। তার ওপর আছে ইংরেজি শিক্ষকদের বদনাম যে, ঐতিহ্যগতভাবে সাহিত্য রচনায় নম্বর কম দেয়ার আপেক্ষিক প্রবণতা।

ইংরেজিতে খারাপ করার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কাঠামো একটু ভিন্নতর ও আংশিক ত্রুটিপূর্ণ। যেমন: প্রশ্নের রাইটিং পার্টে কোনো বিকল্প প্রশ্ন থাকে না। একটি প্যারাগ্রাফ, এপ্লিকেশন, লেটার, স্টোরি, কম্পোজিশন আসে যার দরুণ বাছাই করে লেখার সুযোগ নেই। তাই পারলেও লিখে না পারলেও লিখে, যা মনে চায় তাই লিখে রাখে।

এবার আসি আরেকটু ভিন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ কারণে, সেটি হলো পরীক্ষক কতৃক উত্তরপত্র অবমূল্যায়ন। প্রধান পরীক্ষক হিসেবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময় দেখা যায় একজন পরীক্ষার্থী একটি বিষয় খুবই সুন্দর নিখুঁত ভাবেই লিখেছে কিন্তু মূল্যায়নে পরীক্ষক অহেতুক বা খেয়ালের ভুলে সেটি এড়িয়ে গিয়ে উক্ত পরীক্ষার্থীকে কম নম্বর বা শূন্য দিয়েছেন। আবার উত্তরপত্রের পরীক্ষকের দেয়া প্রাপ্ত নম্বরের বৃত্ত ভরাট ভুল হতে পারে। তবে পরীক্ষক কর্তৃক উত্তরপত্র অধিক/ অতি মূল্যায়নের ঘটনাও ঘটে।

‘যেমন কর্ম তেমন ফল’, ‘বৃক্ষ, তোমার ফলে পরিচয়।’ এই প্রবাদেই আমরা বিশ্বাসী। যেকোনো বিষয়ে যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল বা পাস করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের ভূমিকার পাশাপাশি শিখনযোগ্য, যুগোপযোগী, বাস্তবসম্মত পাঠ পরিক্রমা ও প্রশ্ন কাঠামো পরীক্ষার্থী-পরীক্ষকের মধ্যে একটা নিবিড় সমন্বয় জরুরি। যাইহোক, যুগে যুগেই ইংরেজি ফেলের দায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরই নিতে হবে। আমি আশাবাদী, শিক্ষা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিপর্যয় থেকে দ্রুতসময়ের মধ্যে উত্তরণের পথে সফল পদচিহ্ন আঁকবে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

কৃষিগুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো: বাকৃবি উপাচার্য - dainik shiksha কৃষিগুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো: বাকৃবি উপাচার্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রচারণার চালানোর নির্দেশনা - dainik shiksha ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রচারণার চালানোর নির্দেশনা ভর্তি পরীক্ষার হলে মেয়ে, অপেক্ষারত মা ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে - dainik shiksha ভর্তি পরীক্ষার হলে মেয়ে, অপেক্ষারত মা ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ৩ দিনের রিমান্ডে - dainik shiksha সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ৩ দিনের রিমান্ডে শিক্ষক নিবন্ধনের প্রথম ধাপের মৌখিক পরীক্ষা যাদের - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধনের প্রথম ধাপের মৌখিক পরীক্ষা যাদের ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়াদের রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার আছে: সারজিস - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়াদের রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার আছে: সারজিস কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033259391784668