পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম স্ব-উদ্যোগে কয়েক লাখ টাকার বিভিন্ন বই কেনেন। উপজেলার ১৭৮টির অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই এসব বই দেয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা না থাকলেও স্কুলে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় চাপ প্রয়োগ করে বই নিতে বাধ্য করছেন ইউএনও। বিনিময়ে নিচ্ছেন টাকা।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের ডেকে ইউএনওর কেরানিদের দিয়ে বইগুলো হস্তান্তর করা হয়। অথচ আপত্তি জানালেই নানা অজুহাতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে শোকজ করাচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের। এমন অভিযোগ উঠেছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন আমাদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আপনারা স্কুলে লাইব্রেরি করবেন, এজন্য ইউএনও স্যার কিছু বই দেবেন। এজন্য ৩ হাজার করে টাকা দেবেন। তার নির্দেশনা মেনে অধিকাংশ স্কুল টাকা জমা দেয়। তবে সরকারি টাকা যেহেতু দিতে হচ্ছে, তাই একটা চিঠি ইস্যুর জন্য অনুরোধ জানান কেউ কেউ। এতে ক্ষিপ্ত হন শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও। ফলে, বই নিতে যারা আপত্তি দেখান, পরে তাদের স্কুলে ভিজিট করে অহেতুক অজুহাত দেখিয়ে শোকজ করেন শিক্ষকদের। কোনো শিক্ষককে শিক্ষা অফিসে ডেকে শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন নানা কটু কথাও শোনান। শিক্ষকদের বাধ্যতামূলকভাবে টাকা দিয়ে বই দেওয়ার ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষা প্রাথমিক অফিসার সুলতান মাহমুদ আপত্তি দেখালে তাকেও দায়িত্বে অবহেলা দেখিয়ে শোকজ করেন শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন।’
সাঁথিয়া সদর ক্লাস্টারের কিছু স্কুল বই নিতে আপত্তি দেখালে, সহকারী শিক্ষা অফিসার সুলতানকে দায়ী করেন। তাই দায়িত্ব অবহেলাসহ নানা কারণ দেখিয়ে তাকেও শোকজ করা হয়। এ ছাড়া চোমরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভিজিট করে নানা কারণ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম, সাঁথিয়া ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাতজন সহকারী শিক্ষককে শোকজ করেন। এসব পরিদর্শনে কোথাও কোথাও ইউএনও স্যারও গিয়েছিলেন।
জিসি পুরান ধুলাউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বই বাবদ টাকা চেয়েছিলেন, আমরা ৫ হাজার ৯০০ টাকা দিয়েছিলাম। পরে গত মাসের শেষের দিকে ডেকে ইউএনও অফিস থেকে প্রায় ২০-২২টি বই দেওয়া হয়েছে।’
ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বললেন ইউএনও অফিস থেকে বই আনতে। আমি গিয়ে এনেছি। কোনো নির্দেশ বা এ-সংক্রান্ত চিঠিপত্র পাইনি। শিক্ষা অফিস বললে আমরা সেটিই করি।’
শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের শোকজের ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, ‘শুনেছি কয়েক জায়গায় শোকজ করা হয়েছে। স্কুলে দেরিতে আসাসহ নানা কারণে। বই নেওয়ার সঙ্গে এর যোগসূত্রতা আছে কি না বলতে পারব না।’
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া ২ নম্বর ও চোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ‘শিক্ষকদের দেরিতে স্কুলে আসাসহ নানা কারণে শোকজ করা হয়। তার জবাবও দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুলতান আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি ইউএনও স্যার শিক্ষকদের কিছু বই দিয়েছেন। তবে এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শিক্ষকদের বই নিতে বলা ও টাকা দিতে বলার অভিযোগ মিথ্যা। এ ছাড়া নিয়ম মেনে অপরাধ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের শোকজ করা হয়েছে। এর সঙ্গে বই নেওয়ার বিষয়টির সংশ্লিষ্টতা নেই।’
ইউএনও জাহিদুল ইসলাম বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক বইয়ের বাইরে অন্যান্য জ্ঞানমূলক বই পড়া প্রয়োজন। সেখান থেকেই বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি করতে শিক্ষকদের বই দেওয়া হয়েছে। এখানে কাউকে কোনো ধরনের চাপ দেওয়া হয়নি, কাউকে এ প্রসঙ্গে শাস্তিও দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ ছাড়া এভাবে বই দেয়া ও নিতে চাপ প্রয়োগ করার সুযোগ নেই। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।’