ইউজিসির অপসারিত সচিব ফেরদৌস জামানকে গ্রেফতার দাবি - দৈনিকশিক্ষা

ইউজিসির অপসারিত সচিব ফেরদৌস জামানকে গ্রেফতার দাবি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বিতর্কিত ও একাধিকবার বরখাস্ত  সচিব ফেরদৌস জামানকে পদ থেকে অপসারন করা হয়েছে।  রোববার (১১ আগস্ট) ইউজিসির সহকারী সচিব নাসরিন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়। নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ফখরুল ইসলাম।  ছাত্র-জনতার দাবির মুখে তাকে আপাতত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পরে তার বিরুদ্ধে যাবতীয় অপকর্মের তদন্ত শুরু হবে। তার গ্রেফতার দাবি করেছেন তারই নির্যাতিত সহকর্মী ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। তার ব্যাংক আ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সম্পদের হিসাব তলব করারও দাবি করা হয়।

 

জানা গেছে, ফেরদৌস জামানকে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশনে পাঠানো হয়েছে। একই বিভাগের পরিচালক ফখরুল ইসলামকে নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ফেরদৌস জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার একাধিক অভিযোগ ছিলো। একাধিকবার বরখাস্তও করা হয়।  সচিব পদে নিয়োগে পেতেও অন্যায়ের আশ্রয় নেওয়া এবং অপরাপর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিলো। কুমিল্লা্র ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবির প্রকাশ্য অভিযোগ আনে। কিন্ত ক্ষমতার দাপটে সব অভিযোগ চাপা দিয়ে সচিব বনে যান। শুধু তাই নয় ফেরদৌসের স্ত্রীকেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকরি দেন।  ফেরদৌসের সিন্ডিকেটে নামধারী কয়েকজন সাংবাদিকও ছিলো। যারা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরদৌসের মধ্যস্থতায় চাাঁদাবাজি করতেন। তারাই এখন ফেরদৌস জামানের পক্ষে রিপোর্ট লেখা শুরু করেছে । আর মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে লেগেছে। 

জানা যায়, গত ৬ আগস্ট থেকে ফেরদৌস পলাতক । 

ফিরে দেখা রিপোর্ট : 

সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে বাচাঁনোর পক্ষে ইউজিসি! শিরোনামে  বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর  স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রহমান মাসুদ, এর লেখা ২০১৪ সালের ২৩ জুলাই প্রতিবেদনটি পড়ুন : 

ঢাকা: ইউজিসির সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ফেরদৌস জামানের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির কাজকে প্রভাবিত করতে  অপতৎপরতা চালাচ্ছে স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন- ইউজিসি।
 
স্বয়ং ইউজিসি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দুর্নীতিবাজ ফেরদৌস জামানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি গঠনই করা হয়েছে ফেরদৌস জামানেরই প্রশ্রয়দাতাদের নিয়ে।

এই কমিটির একাধিক সদস্য তাকে সাময়িক বরখাস্তেরও বিরোধিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিটির ২ সদস্য আতফুল হাই শিবলী ও আবুল হাশেম অভিযুক্ত ফেরদৌস জামানের বিভিন্ন অনিয়মের নীরব সমর্থক হওয়ায় তদন্ত প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
 
এর আগে গঠিত অপর তদন্ত কমিটির তদন্ত কাজকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয় ইউজিসির পক্ষ থেকে। তখন ওই কমিটির প্রধান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ কে এম নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ইউজিসি অফিসে এসে ব্যাখ্যা দিতে চিঠি দেয় উচ্চ শিক্ষার তদারকি এ প্রতিষ্ঠানটি।


 
ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোহাব্বত খান সাক্ষরিত গত ১০ জুলাই, ২০১৪ এর সেই চিঠির নমুনা বাংলানিউজের কাছে সংরক্ষিত আছে।
 
অভিযুক্ত ফেরদৌস জামান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়ায়, তদন্তে বাধা সৃষ্টিতেই তদন্ত শেষ না হতেই ইউজিসি এ কে এম নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বলে মন্তব্য প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মকর্তা।
 
এ কে এম নুরুন্নবীর কাছে লেখা ইউজিসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, `আপনি কমিশনের অনুমোদনের বাইরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুরের ৪র্থ শ্রেণির ৩৩ জন কর্মচারীকে ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিতে মে ২০১৩ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত ১৬ লাখ ১০ হাজার ৮০০ টাকা প্রদান করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা অফিসে এসে জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।’
 
অন্যদিকে ফেরদৌস জামানের বিরুদ্ধে নিজ চাকরির রেকর্ড (এসিআর) জালিয়াতিরও অভিযোগ উঠেছে। আগের অনিয়ম ও বরখাস্তের প্রমাণ সরাতে তিনি এসিআরের ২৫টি পৃষ্ঠা গায়েব করে ২৬ নম্বর পৃষ্টার নাম্বার হাতে কেটে দিয়ে পাশে ১ নম্বর পৃষ্ঠা বলে উল্লেখ করেছেন।
 
উল্লেখ্য, বাংলানিউজের হাতে আসা নথিপত্রে দেখা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ফেরদৌস জামানকে ২০০৩ সালের ৫ এপ্রিল সাময়িক বরখাস্ত করে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ।

সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মোফাক্কের হোসেন স্বাক্ষরিত বরখাস্ত আদেশে বলা হয়, ‘জনাব ফেরদৌস জামান, সহকারী পরিচালক(গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগ) এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিপির কপি প্রশাসন বিভাগের সাধারণ শাখা থেকে সংগ্রহকরণ ও কমিশন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যাতিরেকে উক্ত পিপির ফটোকপি এবং বেশ কয়েকটি অনুষদ, বিভাগ ও কোর্স সংক্রান্ত একটি ‍অনুমতিপত্র ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণের অভিযোগসহ আরো কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়। যা তদন্তের জন্য ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং কমিটির তদন্তে তা প্রমাণিত হয়’।
 
‘...তার বিরুদ্ধে এরূপ আচরণ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর (৩) (বি) বিধি মোতাবেক ‘মিস কন্ডাক্ট’ বা ‘অসদাচরণ’ ও ৩ (ডি) বিধি মোতাবেক ‘করাপ্ট’ বা ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ এর পর্যায়ভূক্ত অপরাধ।’

এরপর বিধিমালার ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে ফেরদৌস জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা বলা হয় আদেশে।
 
ফেরদৌস জামানের দুর্নীতি সম্পর্কে সে সময়ের ইউজিসি চেয়ারম্যান এটিএম জহুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুর্নীতির জন্য তাকে শুধু বরখাস্তই করিনি, তাকে চেয়ারম্যানের রুমেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন শুনছি, তিনি নাকি ইউজিসি’র অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা। এ ধরনের অসৎ কর্মকর্তা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির জন্যই ক্ষতিকর।’
 
এদিকে ২০ জুলাই রোববার ইউজিসির ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তা ফেরদৌস জামানের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা অভিযোগের পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশে ফ্যাক্সযোগে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়।

তারই ধারাবাহিকতায়, ২১ জুলাই সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অতিরিক্ত পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) ফেরদৌস জামানকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার।

সোমবার বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
 
সোমবারের এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যম ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে।
 
এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছক অনুযায়ী তথ্য প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানায়। সে মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অতিরিক্ত পরিচালক(পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) ফেরদৌস জামানের পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে দাখিল করে ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
 
এ অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধি ১৯৮৫ এর ধারা ১১(১) অনুযায়ী ইউজিসি কর্তৃপক্ষ তাকে কমিশনের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
 
ফেরদৌস জামানের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য ইউজিসি’র সদস্য প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলীকে আহবায়ক করে ৩সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ইউজিসি’র সদস্য প্রফেসর ড. আবুল হাশেম এবং প্রফেসর ড. মোঃ আখতার হোসেন।
 
কমিটিকে আগামী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
 
এদিকে অভিযোগ উত্থাপনের পরে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে গত বৃহস্পতিবার চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ রোববার এ বিষয়টি নিয়ে বাংলানিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর একদিনের মাথায় দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ইউজিসি।

বিস্তারিত আসছে......................

এইচএসসি পরীক্ষা সিলেবাস ও মানবণ্টন অনুযায়ী হবে - dainik shiksha এইচএসসি পরীক্ষা সিলেবাস ও মানবণ্টন অনুযায়ী হবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির কী দরকার - dainik shiksha এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির কী দরকার এমপিও শিক্ষকদের বেতন তুলতে নতুন করণীয় জানালো বোর্ড - dainik shiksha এমপিও শিক্ষকদের বেতন তুলতে নতুন করণীয় জানালো বোর্ড ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ ও এক শিক্ষকের পদত্যাগ - dainik shiksha ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ ও এক শিক্ষকের পদত্যাগ কুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা - dainik shiksha কুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা ‘কাটপেস্ট’ উপাচার্য মশিউরের পদত্যাগ, অজানা কাহিনী পড়ুন - dainik shiksha ‘কাটপেস্ট’ উপাচার্য মশিউরের পদত্যাগ, অজানা কাহিনী পড়ুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসা শিক্ষকদের জুলাই মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের জুলাই মাসের এমপিওর চেক ছাড় please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003997802734375