দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে সরে না যাওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছে প্রায় ১৯০টি পরামর্শক গোষ্ঠী। খবর আলজাজিরা, বিবিসির। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ এর আগে সতর্ক করেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী সোমবার দুপুর ২টার মধ্যে তাঁবু ছেড়ে না গেলে, বিক্ষোভকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মাঝে পড়তে হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও কয়েক ডজন শিক্ষার্থী সেখানে সমাবেশ করে।
এর আগে সোমবার, হাউজ ডেমোক্র্যাটদের একটি দল কলম্বিয়ার ট্রাস্টি বোর্ডকে ‘তাঁবুগুলো সরাতে ব্যর্থ হলে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে’ পদত্যাগ করতে বলেছিল। এ লক্ষ্যে ২১ জন আইনপ্রণেতা লিখেছেন, ‘গত সপ্তাহ ধরে এই তাঁবুগুলো ইহুদি ছাত্রদের ওপর বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আলোচনার সময় শেষ, এখন পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’
২ সপ্তাহ আগে, ১৮ এপ্রিল ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে নির্মিত একটি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ১০০ জনেরও বেশি ছাত্রকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এই ঘটনার পর বিক্ষোভকারীরা আরও দ্বিগুণ উদ্যমে নতুন করে তাঁবু খাটাতে শুরু করেন। গ্রেফতার ছাত্রের সংখ্যা এরই মধ্যে ১১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার সকালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. শফিক একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এসব ক্যাম্প সরানোর একটি উপায় খুঁজে বের করার জন্য বুধবার থেকে একাডেমিক প্রধানদের একটি ছোট দল ছাত্র সংগঠকদের সঙ্গে আলাপ করছে। দুঃখজনকভাবে, আমরা কোনো সমঝোতায় আসতে পারিনি।’
ছাত্রদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যদি স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে স্বেচ্ছায় আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়, তবে তাদের সেমিস্টার শেষ করার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা অটল রয়েছেন। তারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফিলিস্তিনে যে ৩৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, সেটার তুলনায় এসব ভয়ভীতি কিছুই না। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা নড়ব না। বলপ্রয়োগে আমাদের হটানো যাবে না।
এর কয়েক ঘণ্টা পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন চ্যাং বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ‘সাসপেন্ড’ করা শুরু হয়েছে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সাসপেন্ড করা শুরু করেছে ও সাময়িকভাবে তাদের ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেছে। যাদের স্নাতক শেষ করার বিষয়টি নির্ধারিত ছিল, তারা এখন আর তার জন্য যোগ্য নয়।
বিক্ষোভকারী দলগুলোর মাঝে অন্যতম প্রধান হলো কলম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন। তারা এক্সের একটি পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ অমান্য করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের ‘তাঁবু রক্ষা’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছে প্রায় ১৯০টি পরামর্শক গোষ্ঠী। ব্যাপক ধরপাকড় চলার মধ্যেই তারা যেভাবে আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাতে তাদের সাহসের প্রশংসা করেছে এসব গোষ্ঠী। ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি এই বিক্ষোভে সংহতি জানানো গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে ধর্মীয়, নাগরিক অধিকার ও প্রগতিশীল ভাবধারার বিভিন্ন সংগঠন।
পরামর্শক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস পার্টি, ইফ নট নাউ মুভমেন্ট, সানরাইজ মুভমেন্ট, মুভমেন্ট ফর ব্ল্যাক লাইভস ও জেন-জেড ফর চেঞ্জ। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বলেছে, ‘ভীষণ রকম চাপের পরিবেশ, ভয়ভীতি ও প্রতিশোধের শিকার হওয়া সত্ত্বেও যেসব শিক্ষার্থী গাজায় ইসরাইলি হামলা এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকারের চর্চা করছেন, আমরা তাদের প্রশংসা করি।’