বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএসি) আইন পাস হয় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে নিয়োগ হয় চেয়ারম্যান। নিয়োগের পরে যখন যোগদান করি তখন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কোনো বাজেট ছিলো না, অফিস ছিলো না, লোকবল ছিলো না। একাই ছিলাম।
আমাদের অফিস তৈরির জন্য একটা বাজেট বরাদ্দ হলো। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে। তখন আমরা তাড়াতাড়ি মহাখালীতে একটা অফিস ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলাম। তখনও কিন্তু আমাদের কোনো লোকবল নিয়োগ হয়নি। মাস দুয়েক পর জুনে আমাদের চারজন মেম্বার ও সচিব নিয়োগ করা হলো। তারপর আমরা কিছু কর্মচারী নিলাম অস্থায়ী ভিত্তিতে। এই অল্প কয়েকজনকে নিয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করি। আমাদের অর্গানোগ্রাম পাস হয়েছে পরে। আরো বছর খানেক পর।
অর্গানোগ্রাম অনুসারে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করি। এখনো সেই প্রক্রিয়াটি শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে সরকার থেকে ডেপুটেশনে কিছু কর্মকর্তা আমাদের এখানে এসেছেন। সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক, পরিচালক- এ সমস্ত পদে কিছু সরকারি কর্মকর্তা এসে আমাদের কর্মকাণ্ড সচল রেখেছেন।
বিএসিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অনেক কাজই হয়েছে। এটি একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। আমাদেরকে আইনগতভাবে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো তার ইমপ্লিমেন্টেশনের জন্য আইন, বিধি ও প্রবিধান দরকার ছিলো। সেই কাজগুলো আমরা করেছি। যদিও সময় লেগেছে অনেক। আমাদের সরকারের যে বিধি, সে বিধি আমরা বছরখানেক আগে পাস করতে পেরেছি। প্রবিধানের কিছু অংশ বাকি আছে। তবে যে কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করবো তার আইনগত ভিত্তির বিষয়টাকে আমি নিশ্চিত করেছি।
আমাদের কাজ কিন্তু থেমে থাকেনি। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট ও পাবলিক, তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কর্মকর্তাদের আমরা সেল তৈরির পরামর্শ দিচ্ছি। সেখানে ডিরেক্টর, এডিশনাল ডিরেক্টর থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্য থেকেও। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে কাজ করবেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
আমরা এ পর্যন্ত দেড়শতাধিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও সেমিনারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এখানে আয়োজন করেছি। এ কাজগুলোকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাজটা করতে হলে আমাদের একজন রিসোর্স পারসন লাগবে। যিনি এই কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন বোঝেন। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ শিক্ষক তৈরি করতে হবে। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিউরেন্স অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশনে অভিজ্ঞ শিক্ষক আছেন। তাদের নিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।
এখন আমাদের পুরো সিস্টেমটাকে চালু করার জন্য মাইন্ড সেটআপ চেঞ্জ করতে হবে। আগের পুরাতন সিস্টেমটাকে সরিয়ে নতুন সিস্টেমে যেতে হবে। আধুনিক করতে হবে। আমাদের সমাজের সাথে সম্পৃক্ত রেখে শিক্ষাকে অর্থবহ করার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার সেভাবে আমরা আমাদের আউটকাম বেজড কারিকুলামের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন কারিকুলাম প্রস্তুত হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে মান নির্ধারণের জন্য যা দরকার তা হলো সেই স্ট্যান্ডার্ড ও ক্রাইটেরিয়া। দশটা স্ট্যান্ডার্ড ও ক্রাইটোরিয়া আমরা অনেক প্রথমে ঘষামাজা করেছি, সবার সাথে শেয়ার করেছি, তারপর সেগুলো আমরা মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি, সবশেষে চূড়ান্ত করেছি। তার উপরে প্রচুর প্রশিক্ষণ করিয়েছি।
গত বছর বড় একটা সেমিনার করে সব প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছি, আমরা রেডি আছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন ইচ্ছা করলে অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য আবেদন করতে পারে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। একটিভলি তাদের সাথে এনগেজ হচ্ছি। তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি। তাদের পাঠদান করতে হবে এবং সেই কাজগুলো করে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করবে।
এছাড়া উচ্চশিক্ষার একটি বড় ক্ষেত্র হলো কলেজ। কলেজগুলোতে অনার্স, মাস্টার্স ও ডিগ্রি দেয়া হয়। এমন কলেজ আছে দুই হাজার ২৬৭টি। আমাদের উচ্চশিক্ষায় যারা ডিগ্রি নিয়ে বের হন, তাদের সত্তর শতাংশ কিন্তু কলেজ থেকে আসেন। আমরা আমাদের কাজকর্মকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারিনি।
আমরা কথাবার্তা বলেছি অনেক কলেজের সঙ্গে। পুরনো কলেজ, যেগুলোকে শতবর্ষি কলেজ বলে। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, যেসব কলেজে অনার্স, মাস্টার্স ও ডিগ্রি সেগুলোতে শিক্ষকের প্রচুর স্বল্পতা। কোথাও কোথাও বড়জোর তিনজন/চারজন শিক্ষক আছেন। খুব কম কলেজ আছে যেখানে এর চেয়ে অধিক সংখ্যক শিক্ষক আছেন। তারা অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রি প্রোগ্রাম কীভাবে চালু রেখেছেন, কীভাবে পড়াচ্ছেন আমরা জানি না। আমি মনে করি, কোয়ালিটি ধরে রাখাটা খুব কঠিন কাজ। এসব বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। আমাদের তাদের কাছে যেতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের লোকবল আরো বাড়বে। ক্ষমতা আরো বাড়বে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে, কলেজগুলো সাথে, এই উচ্চশিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের জন্য কাজ করবো।
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলে যারা কাজ করছেন তারা সবাই শিক্ষার সাথে জড়িত। আমাদের এখানে মূল চালিকা শক্তি হলেন সদস্যরা। সবাই শিক্ষার সাথে জড়িত। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন আগে। অনেক খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ আছেন। আমরা সবাই মিলে কর্মপন্থা তৈরি করেছি। আর যারা সহকারী শিক্ষক আছেন তারাও অভিজ্ঞ। আমাদের এখানে যারা কাজ করছেন তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়েছি। তারা সে ভাবেই কাজ করছেন।
লেখক : প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ চেয়ারম্যান, বিএসি