দৈনিক শিক্ষাডটকম, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের অগ্রদূত নিকেতন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের চারতলা ভবন উদ্বোধনের এক বছর না পেরোতেই দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রতারণার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চারতলা ভবনটি গত বছর ১১ মার্চ ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন হলেও ওই সময় এর বিভিন্ন কাজ বাকি থাকে। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র এখনো বুঝে পাননি প্রধান শিক্ষক। এমনকি উদ্বোধনের ফলক লাগানো হয়নি বিদ্যালয়ে, এক বছর ধরে পড়ে আছে পৌর শহরের একটি হোটেলের মেঝেতে।
বিদ্যালয় এলাকার লোকজন জানান, সরকারি বরাদ্দে ভবন নির্মাণের সময় প্রকল্পের ব্যয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রকল্পে কার্যবিবরণী, মেয়াদ ও কাজ শেষ হওয়ার তারিখ সংবলিত প্রজেক্ট প্রোফাইল দৃশ্যমান জায়গায় টানানো থাকা বাধ্যতামূলক। তবে অগ্রদূত নিকেতন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন কোনো প্রজেক্ট প্রোফাইল ছিল না কাজের শুরু থেকেই।
সরেজমিনে জানা গেছে, ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে ও রং উঠে গেছে। পানির বহির্গমন পাইপগুলো ঠিকমতো স্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে অগ্রদূত নিকেতন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ম. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ত্রিশাল উপজেলার সোমা এন্টারপ্রাইজ। নির্মাণকাজের শুরু থেকেই তারা কোনো নিয়ম মানেনি। ঠিকাদার প্রকল্প এলাকায় খুব একটা আসেননি, লেবাররা নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছেন। তাঁদের অবহেলার কারণে কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের সাবমার্সিবল পাম্পটি চুরি হয়ে যায়। পানির বিকল্প ব্যবস্থাও তাঁরা করে যাননি।’
প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘নির্মাণকাজের সময় ৪৭ হাজার টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। ওই বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশল বিভাগকে একাধিকবার বলার পরও ভবনের নকশা, কাজের বরাদ্দের কাগজপত্র ও নির্মাণকাজের কোনো শিডিউল তাঁরা আমাকে দেননি।’
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কাজটি অত্যন্ত নিম্নমানের। সিমেন্ট-বালু আনুপাতিক হারে না দেওয়ায় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। পলেস্তারার সময় সিমেন্টের আনুপাতিক হারের চেয়ে বালি বেশি দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পানিও দেওয়া হয়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে সোমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান কবির বলেন, ‘ভবন ফাটার কথা না, হয়তো পলেস্তারায় ফাটল দেখা দিতে পারে। অনেক সময় পলেস্তারার কাজ করার পর পানি কম দিলে, এমনটা হয়।’
ভবন হস্তান্তরে প্রতারণার বিষয়ে ঠিকাদার বলেন, ‘উনি শিক্ষিত মানুষ, কাগজের লেখা না পড়ে সই দিলেন কেন? সাইনবোর্ড শুরুতে ছিল, নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপপ্রকৌশলী (সিভিল) আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘ভবনটি প্রায় এক বছর আগে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের সাবমার্সিবল পাম্প, বিদ্যুৎ বিলসহ কিছু বিষয় নিয়ে মতবিরোধ চলছে, তা জানি। ফাটলের বিষয়টি আমাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়নি। প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রকল্প এলাকার থাকার কথা। অনিয়ম হলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’