ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে জনপ্রশাসন আর জনপ্রশাসন ছিলো না। সেটি পরিণত হয়েছিলো লুটেরাদের সহযোগীতে।এই স্বীকারোক্তি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদেরই।
তারা বলছেন, এখন প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে রাজনৈতিক কর্মীদের মতো আচরণ করতে না পারেন, সেটা আচরণবিধির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘প্রশাসনিক সংস্কার ও উন্নয়ন: বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন। এটি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে এইচএসসি পরীক্ষা পাসের করার পরই বিসিএস পরীক্ষা নেয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।
সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসনসহ সিভিল সার্ভিসকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো সেই প্রশ্ন তুলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, এটাকে কি কোনো সার্ভিস বলা যেতো? সাড়ে ১৫ বছরে যা হয়েছিলো, সেটি ছিলো একটা দলীয়করণ করা, লুটেরাদের সহযোগী, দেশের সমাজ-অর্থনীতি দুর্বৃত্তায়নে সহযোগীদের একটি সার্ভিস।
তিনি বলেন, এটা জনপ্রশাসন ছিল না। এ রকম একটি সার্ভিস সাড়ে ১৫ বছর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সঙ্গে মিলে দেশকে লুণ্ঠন করে।
জনপ্রশাসন বড় ভাবমূর্তি সংকটে আছে উল্লেখ করে মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আরো বলেন, সাড়ে ১৫ বছরে যে গর্তে পড়েছিলেন, তা থেকে কীভাবে এই সার্ভিসকে ওপরে তুলে আনা হবে এবং ভাবমূর্তিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে, সেই পরিকল্পনা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থাকতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষের (পিপিপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) মো. হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, পদায়ন ও পদোন্নতিতে মেধা, যোগ্যতা, সাহস ও দেশ গঠনে প্রত্যয়-এগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে তদবির ও রাজনৈতিক লেজুড়ভিত্তিক গুরুত্ব দিলে ‘রাইট পারসন ইন দ্য রাইট প্লেস’ (যোগ্য জায়গায় যোগ্য ব্যক্তি) নিশ্চিত করা যায় না।
অতিরিক্ত সচিব মো. শেখাবুর রহমান বলেন, প্রশাসন যন্ত্র সবচেয়ে খারাপ হওয়ার মূলে একটি কারণ হলো রাজনৈতিক প্রভাব। এই রাজনৈতিক প্রভাব থেকে যদি মুক্ত হওয়া যায়, তাহলে প্রশাসনে কর্মরত যাঁরা দক্ষ, যোগ্য কর্মকর্তা আছেন, তাঁরা অবশ্যই জনবান্ধব হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
যুগ্ম সচিব সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রভাবমুক্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। একেবারে সচিব থেকে শুরু করে নিচের পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।