এই সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই দেশে নারীসহ কোনো মানুষের নিরাপত্তা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই সরকার আবার ক্ষমতায় এলে আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারাব, সার্বভৌমত্ব হারাব, আমাদের গণতন্ত্র চিরতরে চলে যাবে, ভোটের অধিকার চলে যাবে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে এক নারী সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল গত দুটি (২০১৪ ও ২০১৮) নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার মা-বোনেরা ভোট দিতে পারেনি গত দুটি নির্বাচনে। তাদের ভোট কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ, তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, এত বেশি অহংকারী হয়ে উঠেছেন, এত বেশি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছেন যে তিনি দেশের মানুষের কথা আর চিন্তা করছেন না। সব রাজনৈতিক দল বলছে, আমরা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন চাই। সেটাকে তিনি উড়িয়ে দিয়ে বলছেন পুরোনো কথা, সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। কারণ, আপনারা ক্ষমতায় থাকলে সেই নির্বাচন কোনো দিন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে ঢাকায় দীর্ঘদিন পর এই নারী সমাবেশ হয়। বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরুর ঘোষণা থাকলেও দুপুর থেকে শত শত নারী কর্মী ও সমর্থক মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। হলুদ, নীলসহ নানা রঙের শাড়ি পরে, মাথায় মহিলা দলের ক্যাপ পরে হাজার হাজার নারী সমাবেশে অংশ নেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আকাশে মেঘ দেখা দিলে সমাবেশের প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
এই সময়ে ঢাকায় নারী সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যখন সারা দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ চায়, তখন এই সমাবেশ নিঃসন্দেহে যাঁরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের কাছে কেউই নিরাপদ নয়। বিশেষ করে নারীদের কোনো নিরাপত্তাই এখন আর দেশে নেই। ১৪-১৫ বছর ধরে আমরা লড়াই করছি, একটি কথাই আমরা বলছি যে এই সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকার জোর করে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকতে আছে।’
হাসপাতালে অসুস্থ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আবারও আহ্বান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, সর্বপ্রথম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য যে ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে, আমরা আশা করি এই সরকার অবৈধ হলেও বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রেখে এখন গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এখন অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর একটিমাত্র কারণ, খালেদা জিয়া যদি বাইরে থাকেন, তাহলে জনগণের স্রোতকে তারা বন্ধ করতে পারবে না। তাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’
এ সময় মির্জা ফখরুল বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে নারী উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শিক্ষায় খালেদা জিয়ার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। চাল-ডাল, তেল-লবণসহ প্রতিটি জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেভাবে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে, সেখানে আপনাদের (নারী) সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। সরকার জিনিসপত্রের দাম বেঁধে দিয়েছে। কেউই দামের কথা মানছে না। সরকার জোর করে ক্ষমতা থাকতে চায়, আপনারা কী থাকতে দেবেন?’ এ সময় সবাই ‘না’ বলে জবাব দেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আসুন, আগামী দিনগুলোতে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ঐক্য গড়ে তুলি। যে ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে, সংসদ বিলুপ্ত করতে, নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচন দিতে। এর মাধ্যমেই শুধু এই সংকট থেকে মুক্ত হতে পারি।’