একই মাদরাসায় দেড় মাসে দুই ছাত্রীর মরদেহ - দৈনিকশিক্ষা

একই মাদরাসায় দেড় মাসে দুই ছাত্রীর মরদেহ

নরসিংদী প্রতিনিধি |

নরসিংদীর শেখেরচরের কুড়েরপাড়ের একটি মহিলা মাদরাসার শৌচাগার থেকে মাইশা আক্তার (১০) নামে এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, আত্মহত্যা; নিহত ছাত্রীর স্বজনদের দাবি, এটি হত্যাকান্ড।

মাইশা সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুরের ডাইং শ্রমিক নেছার উদ্দিনের মেয়ে। সে মাদরাসার আবাসিক ছাত্রী হিসেবে মক্তব ২য় শ্রেণিতে পড়ত।

এর আগে ১৯ অক্টোবর বিকেলে একই মাদরাসার অন্য একটি শৌচাগার থেকে আফরিন আক্তার (১৬) নামের আরও এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল। আফরিন মাধবদীর দড়িগাজীরগাঁওয়ের ডালিম মিয়ার মেয়ে ও মাদরাসার আলিম প্রথম বর্ষের (উচ্চমাধ্যমিক) শিক্ষার্থী ছিল। 

দেড় মাসের মধ্যে মাদরাসাটির শৌচাগার থেকে দুই ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক এবং অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনার সঠিক তদন্ত ও মাদরাসা বন্ধের দাবি করে এলাকায় বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদরাসার শৌচাগারে ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মাইশাকে উদ্ধার করা হয়। পরে মাদরাসার কর্তৃপক্ষ তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জানা যায়, মাদরাসাটিতে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৫০। এর মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থী ৪৫০। পুরুষ শিক্ষক আছেন ৯ জন এবং নারী শিক্ষক ২২ জন। পুরুষ গার্ড দুজন ও নারী গার্ড দুজন। কেউ কেউ মাদরাসায় থাকেন আবার কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ে দায়িত্ব পালন করে চলে যান।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে আসরের নামাজ পড়ছিল সবাই। ওই সময় মাদরাসার ভেতর থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যায়। ভয়ে ও আতঙ্কে ছাত্রীরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। পরে কয়েকজন শিক্ষক শৌচাগারের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, মাইশা তার ওড়নায় ভেন্টিলেটরের রডে ঝুলে আছে। ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামানোর পর দেখা যায়, তখনো সে জীবিত। পরে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগে নেওয়ার পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাইশার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাবা নেছারউদ্দিন ওই মাদরাসায় গিয়ে দুপুরে খাওয়ার জন্য মাইশার হাতে ঘরে রান্না করা খাবার তুলে দেন। দুপুরে পরিবারের সবাই পলাশের ঘোড়াশালে আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। সেখানে থাকতেই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নেছারউদ্দিনের মুঠোফোনে মাদরাসার এক হুজুরের কল আসে। মুঠোফোনে তিনি জানান, মাইশাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, আপনি দ্রুত আসেন। পরে মাইশার মা-বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। সেখানে গিয়ে মাইশাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তার কপাল, গালসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।

মাইশার বাবা নেছার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মাদরাসার ভেতরে কীভাবে কী হয়েছে, আমরা কিছুই জানি না। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমাকে ফোন করে মাদরাসার এক শিক্ষক জানান, মাইশাকে অসুস্থ অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, আপনি দ্রুত আসেন। আমি সেখানে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। নিজে দেখেছি, নার্সরাও জানিয়েছেন, কপাল, গালসহ তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। আমাদের ধারণা, তাকে আঘাত করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমি মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

মাইশার মা রুমা বেগম বলেন, ‘১০ বছরের একটি শিশু কীভাবে গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করতে পারে? আমার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্নই এর প্রমাণ। মাদরাসার হুজুররাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

নরসিংদী সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মোস্তফা কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার গলায় ফাঁসের আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বলা যাবে।’

মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুফতি আহসানুল্লাহ বলেন, ‘ওই ছাত্রী নিজের ওড়নার সাহায্যে শৌচাগারের ভেন্টিলেটরের রডে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এত অল্পবয়সী একটি শিশু কেন আত্মহত্যা করল, খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানতে পেরেছি, তাকে সঙ্গে না নিয়ে বাবা-মাসহ পুরো পরিবার ঘোড়াশালে আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল। এতে কষ্ট পেয়ে মাইশা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। এর আগে তাকে স্বাভাবিকই থাকতে দেখেছে সবাই। সকালে তার বাবা এসে হাতে খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন। দুপুরে অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছে সে।’

পরপর দুই ছাত্রীর মৃত্যু বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘গত ১৯ অক্টোবর আত্মহত্যা করা আফরিন আক্তারের মৃত্যুর বিষয়ে তার পরিবারই কিন্তু স্বীকার করেছে, সে মাদরাসায় আসতে না চাওয়ায় বাবা-মা মারধর করেছিল। জোর করে তাকে মাদরাসায় দিয়ে গিয়েছিল বাবা। গেটের সামনেই তাদের কথোপকথন আমরা জেনেছিলাম। মেয়ে বলছিল, জোর করে মাদরাসায় দিয়ে গেলে আমি আত্মহত্যা করব। বাবা বলছিলেন, মরলে এখানেই মর, আমি এসে লাশ নিয়ে যাব। এরপরই ওই ছাত্রী মাদরাসার একটি শৌচাগারে নিজের ওড়না ভেন্টিলেটরে পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।’

 মাধবদী থানার ওসি মো. রকীবুজ্জামান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতেই খবর পেয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত চলছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও মাদরাসাটির শৌচাগার থেকে আরেকজন ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।’

১১ আগস্ট থেকে নতুন সূচিতে এইচএসসি, এর আগপর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha ১১ আগস্ট থেকে নতুন সূচিতে এইচএসসি, এর আগপর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেলেন ৬ সমন্বয়ক - dainik shiksha ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেলেন ৬ সমন্বয়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন বিপদের কারবার: প্রধান বিচারপতি - dainik shiksha সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন বিপদের কারবার: প্রধান বিচারপতি ৩ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আইনি সহায়তা দিতে আইনজীবী নিয়োগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের - dainik shiksha ৩ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আইনি সহায়তা দিতে আইনজীবী নিয়োগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জামায়াত নিষিদ্ধে আইনি ফাঁকফোকর বন্ধ করা জরুরি - dainik shiksha জামায়াত নিষিদ্ধে আইনি ফাঁকফোকর বন্ধ করা জরুরি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন কিছুক্ষণের মধ্যে: আইনমন্ত্রী - dainik shiksha জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন কিছুক্ষণের মধ্যে: আইনমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059309005737305