রংপুরের বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০ যমজ শিশু পড়াশোনা করে। বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়নুল ইসলাম শাহ জানান, বিদ্যালয়ে ২০ যমজ শিশু। একই লিঙ্গের যমজ শিশুরা দেখতে অভিন্ন হওয়ায় ক্লাসে শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। তবে যমজ শিশুদের অন্য শিশুরা বেশ পছন্দ করে, ভালোবাসে। আমরা শিক্ষকেরাও তাদের প্রতি বাড়তি নজর রাখি।
যমজ শিশু পড়ার খবর শুনে বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক উজ জামান।
তিনি যমজ শিশুদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই শিশুদের প্রতি দৃষ্টি রাখতে শিক্ষকদের পরামর্শ দেন।
তাদের নিয়ে শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের আগ্রহ–উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। বিদ্যালয়ে কথা হয় যমজ শিশুর মা রাশিদা বেগমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁদের বিয়ে হয়। ৯ বছরেও সন্তান না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসার পর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরের বছর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যমজ ছেলে ও মেয়ের জন্ম দেন তিনি। মেয়ের নাম রাখেন জারিন আইমান খান, ছেলের নাম জারিফ আহম্মেদ খান। তারা এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে, বয়স সাত বছর।
যমজ সন্তান লালন–পালনের বিষয়ে রাশিদা বেগম বলেন, ‘যমজ সন্তান লালন–পালন করা কষ্টের। এদের জন্মের পর দুই বছর স্বামী-স্ত্রী রাতে ঘুমাতে পারিনি। খুব কান্নাকাটি করত। মনে হতো, সব ফেলে কোথাও পালিয়ে যাই। পরক্ষণেই ফুটফুটে যমজ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে যেতাম। ছেলের চেয়ে মেয়েটা আমার বেশি মেধাবী। তাদের চাহিদা, রুচিবোধ আলাদা। ছেলে খেতে ভালোবাসে মুরগির রোস্ট। মেয়েটার পছন্দ পোলাও, মাংস ও মিষ্টি। যতই ঝগড়া করুক, একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকতে চায় না।’
নিশাত মুনির (১০) এবং এ এস এম মুনতাসির মুবিন (১০) যমজ ভাই–বোন। বাড়ি বদরগঞ্জের বালুয়াভাটা গ্রামে। জানতে চাইলে নিশাত মুনির বলে, ‘ভাই আমার সঙ্গে খুব ঝগড়া লাগায়।’ এ সময় কথা টেনে বোনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে মুবিন বলে, ‘আমি না, তুমিই বেশি ঝগড়া করো।’
বদরগঞ্জের শাহপাড়া গ্রামের মুকুল দাস ও শেলি রাণী দম্পতির যমজ মেয়ে বর্ণা ও বৃষ্টি। আদর করে ডাকেন হাসি ও খুশি নামে। তারা দেখতে প্রায় একই রকম। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই বোনকে শনাক্ত করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান শিক্ষকেরা।
বর্ণা ও বৃষ্টির মা শেলি রাণী বলেন, তাঁর দুই মেয়ের চাহিদা ও পছন্দ একই রকম। দুজন একই রকম জামা পরে। দুজনেরই ডিম পছন্দ। অসুস্থ হলে দুজন একসঙ্গেই অসুস্থ হয়। ঝগড়া–অভিমান যে হয় না, তা নয়; তবে পরস্পরের জন্য খুব টান। কেউ কাউকে ছাড়া পড়তে বসে না, ঘুমাতেও যায় না।
এই বিদ্যালয়ে পড়ে যমজ শিশু ইমন রায় ও ঐশী রায়। উপজেলার গুদামপাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি। বাবা দুর্জয় রায় ফার্নিচারের ব্যবসা করেন। মা মৌসুমি মোহন্তই সন্তানদের বিদ্যালয়ে আনা–নেওয়া করেন। তিনি বলেন, তাঁর দুই সন্তানের রুচি ও পছন্দে ভিন্নতা আছে। তবে তারা পরস্পরকে খুব ভালোবাসে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সিনিয়র শিশুবিশেষজ্ঞ শাহ আলম আলবানী বলেন, যমজ নবজাতকের বেড়ে ওঠা ও বিকাশে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। যমজ শিশুরা পরস্পরের মধ্যে সহজেই বিনিময় করতে পারে। একসঙ্গে জন্ম হলেও তাদের আচার–আচরণ, রুচিবোধ ও চাহিদা ভিন্ন হতে পারে।
বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে ৬০৭ শিশু। শিক্ষক আছেন ১৩ জন।
রংপুর জেলায় ভালো ফলাফলের জন্য সুনাম থাকায় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করানোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।