এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - দৈনিকশিক্ষা

এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক:  বরগুনার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একে একে ৩৫ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে কেউ জ্ঞান হারিয়েছেন, আবার কেউ কেউ করছেন অস্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু কেনো এমন ঘটনা ঘটছে? এর সঠিক কোনো উত্তর জানা নেই স্কুলের শিক্ষক ও ভুক্তভোগী ছাত্রীদের। তবে ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেরই দাবি, স্কুলে নন্দিনী হাইজিন কর্নার নামে একটি কক্ষে ভৌতিক কিংবা অশরীরী উপদ্রবের কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুলের পাঠদান। 

সাম্প্রতিক বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার (১৪ মে) স্কুলের নন্দিনী হাইজিন কর্নারে প্রবেশ করার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন ৮ ছাত্রী। ওইদিন বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে অভিভাবকদের ডেকে অসুস্থ ছাত্রীদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্কুলের শিক্ষকরা। পরেরদিন বুধবার স্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার পরপরই আবারও ছাত্রীদের অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। তবে আগের দিন অসুস্থর সংখ্যা কম হলেও বুধবার একই স্থানে প্রবেশ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও ২৫ জন ছাত্রী। এদের মধ্যে অসুস্থ ছাত্রীদের সেবা শুশ্রূষা করতে তাদের সংস্পর্শে গিয়েও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার একটি মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অসুস্থ ছাত্রীদের মধ্যে কেউ কাঁদছেন, কেউ কেউ চিৎকার করছেন। কেউ আবার খিঁচুনি দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। এছাড়াও ভয়ে ছোটাছুটি করছেন অনেকেই। 

সরেজমিনে হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, স্কুল বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষক ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীই স্কুলে আসে না। নন্দিনী হাইজিন কর্নার যেখানে প্রবেশের পর ওই ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সে কক্ষটিও একদম পরিপাটি রয়েছে। ছাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করতে স্কুলের শিক্ষকরা বারবার পরিদর্শন করছেন ওই কক্ষটি। এ ছাড়া শিক্ষক মিলনায়তনে ঘটে যাওয়া ঘটনার রহস্য বের করতে শিক্ষকরা আলোচনাও করছেন নিজেদের মধ্যে। 

পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ সুস্থ হলেও এখনও অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন কয়েকজন ছাত্রী। এর মধ্যে কেউ কেউ করছেন অস্বাভাবিক আচরণ। অসুস্থ অবস্থায় নির্বাক বিছানায় পড়ে আছেন ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থী নাবিলাতুন জেমি। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। 

হঠাৎ করে মেয়ের এমন অসুস্থতার বিষয়ে বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মেয়ে স্কুলে গিয়ে নন্দিনী কর্নার নামে সেই কক্ষে প্রবেশ করে অসুস্থ হয়। পরে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসলে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলা শুরু করে। ফকির ও হুজুরের মাধ্যমে মেয়ের চিকিৎসা চালিয়েছি। এতে তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় এখন মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। 

হিমি আক্তার নামের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলের নন্দিনী কর্নারের ওই কক্ষ থেকে আওয়াজ শোনা যেত। এ ছাড়া ওই কক্ষ থেকে প্রায় সময়ই কিছু আসতে দেখা যেত, তখন মনে হত নিজের আশেপাশে কিছু একটা আছে। ওই কক্ষে প্রবেশ করলে মনে হয় কেউ মুখ চেপে ধরছে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যারা ওই কক্ষে গিয়ে অসুস্থ হয়েছে তাদেরকে যারা ধরেছে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমাকেও একজন ধরেছে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। পরে বাসায় এসে আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, নন্দিনী হাইজিন কর্নার নামে স্কুলে মেয়েদের জন্য একটি রুম আছে। প্রতিটি বিদ্যালয়েই এ ধরনের রুম থাকে। যতদিন ধরে আমাদের স্কুলে মেয়েদের জন্য এ রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে এর মধ্যে আর কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার প্রথম দিন ওই রুমে প্রবেশের পর অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েদের চিৎকার শুনে আমরা এসে দেখি একেকজন একেকরকমের কথা বলেছে। কেউ বলেছে দেয়ালে লাল দাগ দেখা গেছে আবার কেউ বলেছে কালো বিড়াল দেখা গেছে। পরে অসুস্থ মেয়েদের শিক্ষকদের রুমে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে অভিভাবকদের খবর দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়।

এক সঙ্গে একটি স্কুলের ৩৫ জন ছাত্রী অসুস্থ হওয়ার বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর হোসেন  বলেন, ভৌতিক কিংবা অশরীরী উপদ্রবের কোনো কারণে স্কুলের ছাত্রীরা আক্রান্ত হয়নি। ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে তারা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এটি তেমন কোনো জটিল কিছু না। চিকিৎসার পাশাপাশি আক্রান্তদের কাউন্সেলিং করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। 

হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নান্না মিয়া বলেন, ঘটনার দিনই আমি বিষয়টি ইউএনও ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি। হঠাৎ স্কুলে মেয়েদের এমন অসুস্থতার কারণে অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে স্কুলের পাঠদান বন্ধ করে প্রকৃত রহস্য বের করতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পরেই  আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যে মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাদের চিকিৎসা ও যে ধরনের ভয়ভীতি রয়েছে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিভাবক ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে কাজ করছি।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069239139556885