ময়মনসিংহ বোর্ডে এক রোলে পরীক্ষা অন্য নম্বরে ফল - দৈনিকশিক্ষা

ময়মনসিংহ বোর্ডে এক রোলে পরীক্ষা অন্য নম্বরে ফল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

দৈনিকশিক্ষাডটকম, ময়মনসিংহ:  অনভিজ্ঞ বেসরকারি সফটওয়ার কোম্পানির সহায়তায় পরীক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণ ও ফল প্রক্রিয়াকরণ  করতে গিয়ে জটিলতায় পড়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। আর ভোগান্তি হয়েছে হাজার হাজর পরীক্ষার্থীর। জানা গেছে, রোল নম্বর পাল্টে যাওয়ায় প্রায় আট হাজার পরীক্ষার্থীর ফল পাল্টে গেছে। পরীক্ষায় বসার জন্য যে প্রবেশপত্র ছিল, তাতে থাকা রোল নম্বরই খাতায় লিখেছিলেন পরীক্ষার্থীরা। তবে ফল আনতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, প্রবেশপত্র ও রোল নম্বর বদলে গেছে। নতুন প্রবেশপত্র অনুযায়ী ফল নিতে হয়েছে। অন্তত আট হাজার শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রে এমন পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে অনেক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন।

গত রোববার প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি হাজারো পরীক্ষার্থী। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, অসৎ উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়েছে। দ্রুত সমাধান দাবি করেছেন শিক্ষক এবং ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তবে শিক্ষা বোর্ড বলছে, প্রযুক্তির ত্রুটির কারণে একই রোল নম্বর দু'জনের বেলায় হওয়ায় তা ফল তৈরির আগেই ধরা পড়ে। নতুন রোল নম্বর দিয়ে ফল দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল অবশ্য স্বীকার করেছেন, নিজস্ব জনবল না থাকায় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। মফস্বলের কলেজগুলোতে শিক্ষার মানের দুর্বলতার কারণে অনেকে অকৃতকার্য হয়েছে। শহরের কলেজগুলোতে রোল নম্বর পরিবর্তন হলেও সেখানে পাসের হার অনেক ভালো।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৫৬ পরীক্ষার্থী। এর মাঝে মাত্র ১৬ জন পাস করেছেন। মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া মোছা. কাকন আক্তার ৪০৮৭২৪ এবং ইসরাত জাহান জেরিন ৪০৮৭২৩ রোল নম্বরে পরীক্ষা দেন। দু'জনই ফেল করেছেন। কাকন আক্তার তাঁর নতুন রোল নম্বরে অনলাইনে অনুসন্ধান করে দেখেন, নিজের নামের পরিবর্তে সুসং দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাজহারুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর নাম আসে। একই ঘটনা ঘটেছে ওই কলেজের কাকন আক্তার, ইসরাত জাহান জেরিনসহ নতুন রোল পাওয়া ৫১ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে। মর্নিং সান স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আরও কয়েকটি কলেজে একই ঘটনা ঘটেছে।

কয়েকটি কলেজের  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, কলেজগুলো কারসাজি করে এমনটি করেছে। শতভাগ পাস করানোর জন্য কিছু শিক্ষার্থীকে গ্যারান্টি দিয়ে এনে ভর্তি করে তাদের শুধু পাস করানো হয়েছে। বাকিদের ফেল করানো হয়ে থাকতে পারে। এ সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাফিজ উদ্দিন সুমন বলেন, এমন ঘটনা আগে কখনও শুনিনি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখন আমাদের দায়ী করছেন। অথচ এসব বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।

ভালুকা থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, পরীক্ষার্থীরা না বুঝে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ওই সময় অধ্যক্ষ অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন-এমন আশঙ্কায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিবেশ শান্ত হয়। মর্নিং সান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান জুয়েল দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানে এ বছর ৮১৫ জন পরীক্ষা দিয়েছে। তার মাঝে ৩০ থেকে ৩৫ জনের এমন সমস্যা হয়েছে।

গফরগাঁও উপজেলার হুরমত উল্লাহ কলেজের একজন শিক্ষক  জানান তার কলেজ থেকে মানবিক বিভাগের ৭৭ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ২০ জন কৃতকার্য হয়েছে। নতুন করে পাওয়া প্রবেশপত্রে অন্তত আটজন পরীক্ষার্থীর জটিলতা দেখা দিয়েছে। নতুন রোল নম্বর দিয়ে ফল যাচাই করতে গিয়ে ভিন্ন বোর্ড ও ভিন্ন শিক্ষার্থীর নাম আসছে। মেয়ে পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর যাচাই করলে ছেলের ছবি আসে। প্রবেশপত্র পরিবর্তনের কারণে সমস্যাটি হয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছর মানবিক শাখা থেকে ৪৮০ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ৩২৭ জন কৃতকার্য এবং ১৫৩ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। কলেজটির অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফল প্রকাশের কিছুদিন আগে মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরোনো প্রবেশপত্র জমা নিয়ে নতুনগুলো দেওয়া হয়। নতুন প্রবেশপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ফল পেয়েছে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. সামছুল ইসলাম বলেন, ৮ হাজারের মতো শিক্ষার্থীর রোল নম্বর ডুপ্লিকেশন হয় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে। পরে সূক্ষ্মভাবে বিষয়টি তদারকি করে নতুন রোল নম্বর দিয়ে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। রোল নম্বর পরিবর্তনের সঙ্গে ফলের কোনো সম্পর্ক নেই। ফল সঠিক রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রেজাল্ট প্রস্তুত করা হয় রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে। রেজাল্টের জন্য রোল নম্বর প্রয়োজন নেই। যেগুলোতে সমস্যা হয়েছে, সেগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে করা হয়েছে। মোট ২৮টি কলেজের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি হয়েছিল। নতুন প্রবেশপত্রে ভিন্ন পরীক্ষার্থী বা ভিন্ন বোর্ড আসার সুযোগ নেই। তার পরও যদি এমনটি হয়ে থাকে, বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দ্রুত সমাধান করে দেওয়া হবে।

এসব বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ঢাকা বোর্ডে প্রবেশপত্রজনিত কোনো সমস্যা হয়নি। ময়মনসিংহের ঘটনা তিনি শুনেছেন।

তিনি আরও বলেন, পাবলিক পরীক্ষার ফল এখন কেন্দ্রীয়ভাবে প্রস্তুত করা হয় না। প্রতিটি বোর্ড আলাদাভাবে তাদের ফল তৈরি করে। এর পর সব বোর্ডের তথ্য ঢাকা বোর্ডে পাঠায়। আমরা শুধু তা কম্পাইল করি। তিনি বলেন, ময়মনসিংহে হয়তো কোনো কারিগরি ত্রুটির কারণে এ বছর এমনটা হয়েছে। নতুন বোর্ড হওয়ায় তাদের নিজস্ব কোনো কম্পিউটার সেন্টার নেই। বাইরে থেকে তারা তাদের কাজ করিয়ে নেয়।
 

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040030479431152