সাক্ষরতা ও উন্নয়ন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এর একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি চিন্তা করা যায় না। বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে আগেরর তুলনায় সাক্ষরতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো দেশের প্রায় ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। শতভাগ জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরজ্ঞান দিতে বর্তমান সরকারের নিরলস চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসন।
আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার সকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাক্ষরতা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, মানুষ সচেতন হয় স্বনির্ভর হয় দেশে জন্মহার এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পায়, স্বাস্থ্য সূচকের উন্নয়ন ঘটে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। সর্বোপরি পরিবার, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে সাক্ষরতার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিস্টিক ২০২২’ অনুযায়ী সর্বশেষ সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিলো, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। তবে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিস্কার করে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জানালেন সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিস্টিক ২০২২’ পর্যালোচনা করেও দেখা গেছে সর্বশেষ সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বিষয়টি ইতোমধ্যে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতাসৃষ্টিকরণ এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত ও ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন ২০১৪ প্রণয়ন করেছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২১-২০২৫) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা খাতের জন্য তিনটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেগুলো হলো প্রায় ৩৩ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন (৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার) কিশোর-কিশোরী ও বয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সাক্ষরতা দেয়া, মৌলিক সাক্ষরতা অর্জনকারী ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) নতুন সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিকে কার্যকর দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেয়া ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। ইউনেস্কো ঘোষিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্যের বাংলা মূলভাব ‘পরিবর্তনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাক্ষরতার প্রসার’।