বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে ঘুষ চাওয়ার একটি ভিডিও দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে এসেছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান। অভিযোগ উঠেছে, তিনি এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) মো. মুক্তার হোসেনের কাছে ঘুষ দাবি করেছেন।
জানা গেছে, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারিতে মুক্তার হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ফ্রেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে একই বছরের জুলাই মাসে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকের এমপিওভুক্ত হয়।
অভিযোগ উঠেছে যোগদান ও এমপিওভুক্তির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তার হোসেনের কাছে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ঘুষ দাবি করেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে।
এদিকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি আবারও এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে একই বছরের ২ ফ্রেব্রুয়ারিতে সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন মুক্তার হোসেন। কিন্তু যোগদান করলেও এখনও এমপিভুক্ত হতে পারেননি তিনি। সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও এমপিও বাবদ ঘুষ দাবি করেন। এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার বরাবর ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তার হোসেন।
সুপারিশপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. মুক্তার হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে অভিযোগ করে বলেন, যোগদান ও এমপিওভুক্ত করার জন্যে আমার কাছে কয়েক দফায় টাকা নেন প্রধান শিক্ষক সাইফুল স্যার। তারপরও এমপিও ফাইল না পাঠিয়ে আবার নানা অজুহাত দেখিয়ে ফের টাকা নেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, গোপনে স্মার্ট ফোন দিয়ে তথ্য প্রমাণ রেখেছি। যদি এমপিওভুক্ত না হয় তাহলে আমার প্রমাণ কাজে লাগবে তাই ভিডিও করেছি। অবশেষে যোগদান ও এমপিওভুক্ত হলেও নানাভাবে আমাকে প্রতিষ্ঠানে হয়রানি করতেন প্রধান শিক্ষক স্যার। হয়রানি করায় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ইনডেক্স নম্বর নিয়ে এনটিআরসিএর মাধ্যমে আবারও একই উপজেলার সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যোগদান করেছি। কিন্তু যোগদানের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাননি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মমিনুর ইসলাম। তিনিও এমপিও ফাইল নিয়ে হয়রানি করে আসছেন ও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দাবি করেন।
এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এমপিও বাবদ কোন টাকা চাইনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকে যোগদান ও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে এবং ইনডেক্স নিয়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন। আর যে ভিডিওটি রয়েছে তাতে আমার কন্ঠ নয় বলে দাবি করেন তিনি।
সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকের এমপিওর আবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুর ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই শিক্ষকের এমপিওর ফাইল পাঠানো হয়নি। আগের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করতেন। এমপিওর আবেদন করতে ওই শিক্ষকের কাছে কোনো টাকা দাবি করিনি। যা বলছে তা মিথ্যা।
জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) মো. শামছুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকের যোগদান ও এমপিওভুক্তি নিয়ে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকের যোগদান ও এমপিওভুক্তির জন্য কোন টাকা লাগে না।