দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে অধিদপ্তরের উপসচিব পরিচয়ে ফোন করে এক ব্যক্তি। শিক্ষকদের জানানো হয় চাহিদামতো টাকা দিলে তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে। তাকে বিশ্বাস করে প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়েছেন চার মাদরাসার শিক্ষকরা । টাকা নেওয়ার পর দিন যায়, মাস যায় এমপিওভুক্ত হয় না।
উপসচিব পরিচয়ে টাকা নেওয়া ব্যক্তির নাম জুবায়ের ওরফে আসাদুজ্জামান মানিক ওরফে লুৎফর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে এ নামে কোনো কর্মকর্তা নেই।
ভুক্তভোগীদের একজন হলেন বরগুনা সদরের পূর্ব হাজারের একটি মাদরাসার অধ্যক্ষ। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের ছয় শিক্ষকের জন্য ১৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকদের আবেদনের কিছুদিন পর উপসচিব পরিচয়ে একজন কল করে টাকা দাবি করে। আমরা ছয়জনের জন্য ১৪ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারি প্রতারিত হয়েছি। টাকা দেওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারলে তাদের বেতন-ভাতা বাড়বে। এ আশা থেকেই টাকা দেওয়া।
প্রতারণার শিকার একজন ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বংশাল থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই। তদন্তে পাওয়া তথ্য ও প্রতারিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে জুবায়ের ওরফে মো. আসাদুজ্জামান মানিক ওরফে লুৎফর রহমানকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ফলগাছা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য সহযোগী আব্দুল গফফার ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে সাইফুলকে রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি দল।
পিবিআই বলছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভুয়া উপসচিব, প্রোগ্রাম অফিসার কখনো সিস্টেম অ্যানালিস্টের পরিচয়ে তারা মাদরাসার শিক্ষকদের টার্গেট করে। এরপর এমপিওভুক্তি ও নব নিয়োগপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ানদের বেতন-ভাতা নিয়মিত করে দেওয়ার আশ্বাসে ৪ কোটি টাকার বেশি প্রতারণা করে আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে শুধু চার মাদরাসার শিক্ষকদের থেকে নিয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
পিবিআই জানিয়েছে, বরগুনার পূর্ব হাজার বটতলা সিনিয়র মাদরাসা থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার, নাটোরের বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ৮৫ হাজার, ভোলার উত্তর চরমানিকা লতিফীয়া দাখিল মাদরাসা থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার, জয়পুরহাটের মোহাব্বতপুর আমিনিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে প্রতারকরা। এ চারটি প্রতিষ্ঠানসহ অন্য মাদরাসা শিক্ষকদের কাছ থেকে আরও ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছে দুই প্রতারক।
এ ছাড়া অন্য প্রতারিতরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানিয়েছেন পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) কার্যালয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি জাহাঙ্গীর আলম। কোনো কর্মকর্তা এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সে রকম তথ্য পাইনি। জুবায়ের ওরফে আসাদুজ্জামান মানিক মূলহোতা। সে আব্দুল গফফারকে নানা পরিচয়ে ব্যবহার করত। ২০১৯ সাল থেকে তারা শতাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে।