ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ আগামী জাতীয় নির্বাচনে শিক্ষকদের পরিবার পরিজন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা (শিক্ষকরা) বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেন, আমি তা দেখেছি; সামনে জাতীয় নির্বাচন, এ নির্বাচনে আপনারা অর্থাৎ দেশের সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক যদি আপনাদের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকেন তাহলে আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী আপনাদের বিষয়গুলো দেখবেন।
আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন’ শীর্ষক আলোচনায় সভায় আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমাদের সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আপনাদের সাথে দেখা করেছেন কথা বলেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, আপনাদের জন্য কিছু করার। আপনারা যদি আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে থাকেন তাহলে আমিও আপনাদের বিষয়গুলো (জাতীয়করণ) প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বলবো।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তিনি কলকাতায় গিয়ে সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবং ৬৬’র ছয় দফায়ও তিনি সবার শিক্ষার কথা জানিয়েছেন। ৬২’র শিক্ষা কমিশন একটি অসঙ্গতিপূর্ণ আইন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ জানান, বর্তমান আধুনিক বিশ্বে শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে, দক্ষতাভিত্তিক যোগ্যতা বৃদ্ধি করা—এটিও বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন ছিল। তিনি চেয়েছিলেন, এ দেশের তরুণদের জাতীয় ক্ষেত্রে ভূমিকা আরও বলিষ্ঠ করে জাতীয় উন্নতি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, দেশের জন্য কাজ করবে, তারা সত্যিকারের মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে—এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন।
বর্তমানে দেশে নয় থেকে এগারো ধরনের প্রাথমিক শিক্ষা বিদ্যমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, শিক্ষায় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি যদি একমুখী হতো বা সকল শিক্ষার্থীরা এক ধরনের শিক্ষা পেত তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা একই ধরনের চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠতো—এটিও বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনের মধ্যে ছিল।
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক নিয়ে এই শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যদি ক্রেতা-বিক্রেতার মতো সম্পর্ক বজায় রাখে তাহলে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যায়। এরপরও যে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নির্মোহভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্যে সম্পর্ক বজায় রাখছেন তারাই সত্যিকারের মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠছেন। তারাই এ সমাজকে এগিয়ে যাবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার আন্দোলন করেন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা। সারাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। শুরুতে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকে সন্তোষজনক আশ্বাস না পেয়ে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে আশ্বাসে স্থগিত হয় সে আন্দোলন।