সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূ গণধর্ষণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় করা পৃথক দুটি মামলা ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেগুলো এখনো দ্রুত বিচারে স্থানান্তর করা হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনো গেজেটও জারি করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে মামলা দুটির বিচার সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বন্ধ হয়ে আছে।
আইনজীবীরা বলছেন, এতে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বিচার দীর্ঘসূত্রতার দিকে যাচ্ছে। সেই সুযোগে আসামিরা জামিনে বের হয়ে যেতে পারেন। বাদীপক্ষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
জানা যায়, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গেলে ওই গৃহবধূকে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরদিন গৃহবধূর স্বামী ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে পৃথক মামলা করেন। ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি গণধর্ষণ মামলায় অভিযোগ গঠন করে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ৫১ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় তাদের মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজনকে দল বেঁধে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আসামি রবিউল ও মাহফুজুরকে ধর্ষণে সহায়তা করতে অভিযুক্ত করা হয়। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগের কর্মী। অন্যদিকে এ ঘটনায় করা চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের মামলাটি সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার চলছিল। এরপর ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাদীপক্ষের করা এক আবেদনে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ ঘটনায় করা মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করার আদেশ দেন। পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলা দুটি চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক বিবেচনায় নিয়ে তা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের) নেতৃত্বে গঠিত মনিটরিং কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চিঠিও লেখা হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এমনই এক পরিস্থিতিতে বাদী পক্ষ মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেন। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলা দুটি অনতিবিলম্বে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আব্দুল কাইয়ুম বলেন, হাইকোর্ট অনতিবিলম্বে মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে বলেছেন। ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দুটির আর বিচার হচ্ছে না। সব কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। তিনি বলেন, সরকার পক্ষ থেকে মামলা দুটি দ্রুত বিচারে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা আদালত অবমাননার শামিল। প্রয়োজনে আবারও হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিলেটের একটি মাত্র নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজারের ওপরে মামলা বিচারাধীন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই মূলত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আবেদন করা হয়। কিন্তু এখনো সে অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো গেজেট জারি হয়নি। ফলে মামলা দুটি এখনো নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।